গোবরের কোর্টে খেলেই টেনিসের বিশ্বতারকা সানিয়া মির্জা

ভারতের নারী ক্রীড়াঙ্গনের অগ্রদূত বলা হয় সানিয়া মির্জাকে। একক ইভেন্টে কখনও চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও দৈত ইভেন্টে জিতেছেন ছয়টি গ্র্যান্ড স্লাম। টেনিসের সেই রানি চলে গেলেন অবসরে। 

২০০৫ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের তৃতীয় রাউন্ডে গ্র্যান্ড স্ল্যাম সার্কিটে প্রবেশ করেন সানিয়া। একই বছর উইম্বলডনের দ্বিতীয় রাউন্ডে এবং ইউএস ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে খেলেন।  

সম্প্রতি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ২০ বছরের টেনিস ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন সানিয়া মির্জা। 

তিনি জানিয়েছেন, ছয় বছর বয়সে দক্ষিণ ভারতীয় শহর হায়দরাবাদে গোবর দিয়ে তৈরি ধুলোময় কোর্টেই তার ক্যারিয়ার শুরু হয়। 

সানিয়া মির্জা বলেন, এখন থেকে ঠিক ৩০ বছর আগের কথা। তখন আমার বয়স ছিল মাত্র ৬ বছর। সেই সময়ে ভারতীয় কোনো তরুণী টেনিসে ক্যারিয়ার গড়বে কল্পনাও করতে পারত না। সেই সময়ে আমি একটি স্থানীয় স্পোর্টস ক্লাবে খেলেছি, যেখানে গোবর দিয়ে কোর্ট তৈরি করা হয়েছিল। 

তিনি আরও বলেন, সেই সময়ে বিভিন্ন খেলায় আমার পারদর্শীতা ছিল। আমি সাঁতার কাটতাম, টেনিস খেলতাম এবং স্কেট করতাম। আমি টেনিসে দ্রুত উন্নতি করতে শুরু করি, আমার বাবা মা এবং কোচ টেনিসে মন দিতে বলেন। আমি ৮ বছর বয়সে অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী রাজ্যের টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে আমার বয়সের দ্বিগুণ বয়সী একটি মেয়েকে হারিয়েছিলাম। সেটা একটা স্ট্যান্ডআউট ম্যাচ ছিল, যা আমার আজও মনে আছে। 

পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান তারকা ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের স্ত্রী সানিয়া মির্জা আরও বলেন, আমি যখন টেনিসে ক্যারিয়ার গড়ি তখন অনুসরণ করার মতো কোনো রোল মডেল ছিল না। একজন নারী খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।এ উপমহাদেশের সব মেয়েদের অনেক কিছু করতে বারণ করা হয়। 

ছেলের জন্মের পরও টেনিসে ফেরা প্রসঙ্গে সানিয়া বলেন, এটা সত্যিই শারীরিকভাবে কঠিন ছিল। মানসিকভাবে, আমি প্রস্তুত ছিলাম। গর্ভাবস্থায় আমার ২৩ কেজি ওজন বেড়ে যায়, তারপরও আমি কোর্টে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেই এবং চার মাসে ২৬ কেজি ওজন কমাই। শুধু তাই নয়, শারিরীকভাবে ফিট হওয়ার পাশাপাশি খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু গ্র্যান্ড স্ল্যাম কোর্টে আমার ছেলে আমার কোলে ছুটে আসছে, এমন ভিডিও সব সময় একজন মাকে অনুপ্রাণিত করে। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম যে মা হওয়ার পরও স্বপ্ন দেখা সম্ভব। 

অবসর পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে সানিয়া মির্জা বলেন, নিরিবিলি জায়গায় থাকা। আমার ছেলের সাথে কিছু ভালো সময় কাটানো। আমি অনুভব করি যে তার এখন আমাকে আগের চেয়ে বেশি প্রয়োজন, বিশেষ করে তার স্কুলজীবনে। এরপর দুবাইতে আমার কয়েকটি টেনিস একাডেমি এবং হায়দরাবাদে একটি একাডেমি রয়েছে সেগুলোর যত্ন নেওয়া দরকার।

সানিয়া মির্জা আরও বলেন, উপমহাদেশে খেলাধুলায় সাফল্য অর্জনের জন্য প্রত্যেক মেয়েকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়ে; সেটা সাংস্কৃতিক বা ধর্মীয়ই হোক না কেন। আমি যদি সেই সব মেয়েদের অনুপ্রাণিত করতে পারি তাহলে আমি খুশি হব। আমি যদি কয়েকজনকে অনুপ্রাণিত করতে পারি, তাহলে আমার মনে হবে আমার যাত্রা পরিপূর্ণ হয়েছে।

LEAVE A REPLY