স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় মহাসচিবের সামনেই নারায়ণগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. বিধান চন্দ্র পোদ্দারের ওপর হামলা করেছেন একদল চিকিৎসক।
হামলার শিকার ডা. বিধান বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৭-৮ জনকে আসামি করে সদর থানায় মামলা করেছেন বলে নিশ্চিত করেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় জেলা গ্রন্থাগারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান চলাচলে এ ঘটনা ঘটে।
স্বাচিপের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. কামরুল হাসান মিলনের সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন বিধানসহ কয়েকজন চিকিৎসক নেতা।
ওসি জানান, মামলার পর থেকেই আসামিরা পালিয়ে আছেন এবং তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে এ হামলার ঘটনার সিসি টিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে চিকিৎসক মহলে চলছে সমালোচনা ও ক্ষোভের ঝড়।
বিধানের অভিযোগ, বুধবার গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান ছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ডাক্তার, সাংবাদিক, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা আসেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে স্বাচিপের তিনজন নেতাও রয়েছেন। আমি যেহেতু নারায়ণগঞ্জ স্বাচিপের সাধারণ সম্পাদক এবং বিএমএ (বাংলাদেশে মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন) নারায়ণগঞ্জের সহ-সভাপতি সেহেতু আমাকে আগেই খবর দেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যার আগে গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে নামতেই দেখি সেখানে বিএমএ নির্বাচনে পরাজিত হওয়া ডা. আতিকুজ্জামান সোহেল, ডা. নিজাম, ডা. অলোক এবং বেশ কয়েকজন বহিরাগত আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছেন। আমি নামতেই আমাকে ডা. সোহেল ও ডা. নিজাম ‘তুই এখানে কেন?’ বলেই আক্রমণ শুরু করে। তাদের সঙ্গে থাকা বহিরাগতরাও এ সময় হামলায় অংশ নেয়। কী কারণে মারা হলো আমাকে? কেন এই আক্রমণ তা আমি জানি না।
অপরদিকে ভাইরাল হওয়া সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, জেলা গ্রন্থাগারে একটি কালো রঙের নোয়া মাইক্রোবাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই ডা. বিধানের শার্ট চেপে ধরে ডা. সোহেল টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর তাকে বেশ কয়েকজন মিলে মারধর করতে করতে গ্রন্থাগারের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
স্বাচিপের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বীরু বলেন, একজন চিকিৎসকের ওপর এভাবে হামলা চালানো খুবই ন্যক্কারজনক। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের চিকিৎসকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনায় জড়িত ডা. আতিকুজ্জামান সোহেলকে বহিষ্কারসহ আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে বিএমএর নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. দেবাশীষ সাহা বলেন, ডা. বিধানের ওপর হামলা করে ডা. সোহেল ও বেশ কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। পরে আমি ও সাধারণ ভোটাররা তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করি। এ সময় তার বুকে, চোখে ও কানে মারাত্মক যখমের চিহ্ন দেখা যায়। আমরা এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাই।
ঘটনাস্থলে থাকা স্বাচিপের কেন্দ্রীয় মহাসচিব যুগান্তরের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আমি কেন্দ্রীয় সভাপতিকে অবহিত করেছি। অবশ্যই এ ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ঘটনার অভিযুক্ত ডা. সোহল ও ডা. নিজামের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
তাদের চেম্বার ও বাড়িতে গিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই এই দুই চিকিৎসক তাদের মোবাইল বন্ধ করে নিরুদ্দেশ আছেন।