শ্রমবাজারে সম্ভাবনার হাতছানি

ফাইল ছবি

সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় সংকট দেখা দিলেও ইউরোপে সম্ভাবনার হাতছানি

বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। সিন্ডিকেট জটিলতায় ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার বাজার। অনিশ্চয়তার বাজারে সুযোগ নিচ্ছে নেপাল। সৌদি আরবের বাজারেও সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গা ইস্যু বড় করে সামনে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সুখবর কমার মধ্যে ইউরোপের ২০টি দেশ বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য নতুন শ্রমবাজারের হাতছানি দিচ্ছে। দেশগুলোতে এরই মধ্যে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কাতার ও কোরিয়ার বাজারেও কর্মী যাচ্ছে। লিবিয়ার বাজারও সম্ভাবনা জাগিয়েছে। আর্জেন্টিনা দূতাবাস খোলায় নতুন স্বপ্ন দেখছেন অনেকে। রেমিট্যান্সের ধাক্কা ওঠানামা করলেও স্বস্তি মিলছে না।

জানা গেছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ের ইউরোপীয় দেশ গ্রিসে বিনা খরচে বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপদ অভিবাসন ও কর্মসংস্থানের জন্য ২০২২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গ্রিস ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এটি ইউরোপের কোনো দেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার প্রথম চুক্তি। এর আওতায় দেশটির কৃষি, পর্যটন ও তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ৫ বছরের ভিসা সরবরাহ করবে গ্রিস সরকার। প্রতি বছর ৪ হাজার করে বাংলাদেশি কর্মী যাবেন দেশটিতে। পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও মলদোভা। এ দেশগুলোতে নির্মাণ, জাহাজশিল্প, কৃষি খাত, শিল্পকারখানা, তৈরি পোশাক শিল্প, কেয়ার গিভিং ও রেস্তোরাঁ শিল্পে বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানের দুয়ার খুলেছে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল নাগাদ ১৬ হাজার ৪০৯ জন বাংলাদেশি কর্মীকে ভিসা দিয়েছে রোমানিয়া। এরই মধ্যে ঢাকায় অস্থায়ী কনস্যুলেটও খুলেছে দেশটি।

এ প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মনিরুছ সালেহীন জানান, মধ্যপ্রাচ্যের বিকল্প হিসেবে ইউরোপের শ্রমবাজার ধরতে কাজ করছে পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইউরোপের ২০টি দেশ এখন আমাদের জন্য নতুন শ্রমবাজারের হাতছানি। তিনি আরো বলেন, গ্রিস শুরু করেছে, আমরা একটা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছি। নতুন কর্মীরা সহজেই যেতে পারবেন দেশটিতে।

ইতালিতেও কথা হচ্ছে। ওই দেশটিতে অনেক বাঙালি থাকেন, তারাও মৌসুমি শ্রমিক নেয়ার কথা বলেছেন। ঠিক একইভাবে মাল্টাও কর্মী নিতে চেয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিক নেয়ার চাহিদা আসছে। জার্মানির সঙ্গে জিটুজি চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যনির্ভরতা কাটাতে এরই মধ্যে মলদোভা, সার্বিয়া, যুগোস্লাভিয়া, আলবেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া ও মাল্টায় কর্মী পাঠানো শুরু হয়েছে। সরকার ইতালিসহ বাকি দেশগুলোর সঙ্গে দক্ষ কর্মী নিতে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা, সমঝোতা স্মারক সই ও জিটুজি চুক্তি স্বাক্ষরের জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো।

এ বিষয়ে বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় মানুষ যাচ্ছেন, রোমানিয়াতেও যাচ্ছেন। ইতালিতেও একটা সুযোগ দেয়ার কথা ছিল অস্থায়ী কর্মী নেয়ার, মানে মৌসুমি কর্মী নেয়ার। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নিয়োগের কোনো চুক্তি না থাকায় দেশটির শ্রমবাজারের সুবিধা পেতে জার্মান সরকারের সঙ্গে জিটুজি চুক্তি স্বাক্ষরের চেষ্টা চালাচ্ছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

এদিকে বিদেশ যাওয়ার পর আকামা জটিলতায় বেকার জীবন কাটানো, কোম্পানি মালিকের বিরুদ্ধে ঠিকমতো বেতন পরিশোধ না করা, কখনো কখনো কর্মীদের তুচ্ছ ঘটনায় নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশের প্রধান শ্রমবাজার সৌদি আরবে জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বলা যায়, দেশটি থেকে বিদেশি শ্রমিকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরবগামী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যদিও সার্বিকভাবে বিদেশগামী শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ ওমানে কর্মী যাওয়ার হার তুলনামূলক বেড়েছে বলে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর পরিসংখ্যান মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সৌদি আরবে কর্মী গেছে (নারী-পুরুষ) ৪২ হাজার ৬৯৭ জন। অথচ গত বছর একই সময়ে দেশটিতে শ্রমিক গিয়েছিল ৭১ হাজার ১৭২ জন। তুলনামূলক হিসাবে দেশটিতে শ্রমিক যাওয়ার হার প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ওমানে শ্রমিক যাওয়ার হার অবশ্য বেড়েছে। এই বছরের জানুয়ারি মাসে দেশটিতে শ্রমিক গেছে ১৭ হাজার ৬৯৪ জন। অপরদিকে ২০২২ সালের একই সময়ে শ্রমিক গিয়েছিল ১৪ হাজার ৫১৫ জন। সিংগাপুরের বাজারেও নতুন কোনো খবর মিলছে না।এমকে

LEAVE A REPLY