‘মান্নার মৃত্যুর পর স্বজনদের অবস্থা দেখে হতবাক হয়েছি’

২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ভয়ানক এক শোকের দিন। সেদিন অগণিত ভক্তকূলদের কাদিয়ে না ফেরার দেশে পারি জমান চিত্রনায়ক মান্না। তার মৃত্যুতে শোকে ‘পাথর’ হয়েছিল পুরো পরিবার। 

মান্নার মৃত্যুর পরদিন আত্মীয় স্বজনদের বদলে যাওয়া দেখে অবাক হয়েছিলেন তার পরিবারের সদস্যরা। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মান্নার স্ত্রী শেলী। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসুবকে এক পোস্টে শেলী বলেন, পরদিন ১৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল থেকেই আমার চারপাশের অনেক স্বজনের মানবিক চরিত্রের বদল ঘটেছিল। 

শেলী মান্না বলেন, আমার স্বামীর এভাবে আকস্মিক চলে যাওয়া আমাদের জন্য বিশাল শূন্যতা ও বিষণ্নতার। পরবর্তী সময়ে আমার কাছের অনেক স্বজনের দূরে সরে যাওয়া দেখে হতবাক হয়েছি। খুব কাছ থেকে অনেককে দেখেছি, দিনের পরদিন তারা একসময় অচেনা হয়ে গেলেন। এ সময় আমি মান্নার কর্মকাণ্ড ঘিরে ও আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে সমর্পণ করি। 

শেলী আরও বলেন, কিংবদন্তি অভিনেতা, প্রযোজক মান্নার অগণিত ভক্তকূল, সিনেমাপ্রেমী স্বজন ও পরিবারের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল মান্না ফাউন্ডেশন গঠন নিয়ে। পরে আমরা ফাউন্ডেশন গঠন করি। সেখানেও একসময় সক্রিয় থাকা সম্ভব হয়নি।

মান্নার রেখে যাওয়া কৃতাঞ্জলি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্রবিষয়ক কর্মকাণ্ডের হাল ধরেন শেলী। সেই অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানেও আমি এক বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের ফাদের বেড়াজালে পড়ে যাই। সম্মান বাঁচাতে বৈষয়িক অনেক বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে লাগলাম। আমাকে শূন্যতা, বিষণ্নতা ও চরম পরিস্থিতি থেকে একবারে টেনে তোলার মতো কোনো স্বজন এগিয়ে আসেননি। যেমনটা আমি একসময় অনেকের অনেক সমস্যায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলাম। শুরু হয় জীবনযুদ্ধ। সেই সঙ্গে কাছের মানুষেরাও হয়ে যায় চির অচেনা।

শেলী আর বলেন, এখন পারিবারিক, রক্তের বন্ধন ও সামাজিক বন্ধন অনেকাংশেই বিলুপ্তির পথে। আর এই বন্ধনকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে সামাজিক ও পারিবারিক অবক্ষয়কে রোধ দরকার বলেই মান্না ফাউন্ডেশন কাজগুলো নিয়মিত করবে। ‘এসো মানববন্ধন গড়ি’ শিরোনামে এখানে শিক্ষণীয় ও দৃষ্টান্তমূলক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ হবে। সেগুলো টেলিভিশন ও কৃতাঞ্জলির ডিজিটাল চ্যানেলে প্রকাশ পাবে।

শেলী বলেন, এবার আমরা মানবিক ও উদারমনা সংগঠকদের নিয়ে ফাউন্ডেশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। দেশপ্রেম ও সংগঠনের কার্যক্রমকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতিটি কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। নারী-পুরুষের সম্মিলিত ভূমিকা থাকবে এই সংগঠনের কর্মকাণ্ডে।

মান্না মারা যাওয়ার পর ২০০৯ সালের পয়লা বৈশাখে গঠন করা হয় মান্না ফাউন্ডেশন। পরবর্তীকালে বাংলাদেশজুড়ে ২৪৫টি অঙ্গসংগঠন তৈরি হয়। শেলী বলেন, আমরা ২০১৪ সাল পর্যন্ত এর কার্যক্রম চালিয়ে যাই। পরে রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে ফাউন্ডেশনের কর্মকাণ্ড কিছুটা থেমে যায়। এ ছাড়া আমাদের ফাউন্ডেশনের কার্যকরী কমিটির শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিভাবক চাষী নজরুল ইসলাম ভাইসহ সাতজন মারা যাওয়ার পর আমরা আরও ভেঙে পড়ি। এরা সবাই ছিলেন মান্নাঘনিষ্ঠ।

LEAVE A REPLY