মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে দুই ধরনের টিস্যু থাকে—নিউরন ও তার সাপোর্টিং টিস্যু। মস্তিষ্কের আবরণের নামকে বলে মেনিনজেস। মস্তিষ্কের টিউমার সাধারণত সাপোর্টিং টিস্যু, মেনিনজেস এবং কিছু গ্রন্থি থেকে হয়ে থাকে। বয়সভেদে টিউমার বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে; যেমন—শিশুদের কিছু টিউমার বেশি হয় আবার বড়দের ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম।
মস্তিষ্কের টিউমারের প্রকারভেদ
সব টিউমার মানেই যে ক্যান্সার, তা কিন্তু নয়। এই টিউমার দুই প্রকারের হয়—ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার এবং বেনাইন টিউমার, যা তুলনামূলক ভালো। ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমারকে প্রাইমারি টিউমার ও সেকেন্ডারি টিউমার—এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
কারণ
মস্তিষ্কের বেশির ভাগ টিউমারের কারণ অজানা। যেসব কারণে এই টিউমারের ঝুঁকি বাড়ে তার মধ্যে বংশগত হচ্ছে নিউরোফাইব্রোমেটোসিস। এ ছাড়া রাসায়নিক পদার্থ এবং তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শেও এই টিউমার হতে পারে।
লক্ষণ
মস্তিষ্কের টিউমারের ক্ষেত্রে লক্ষণ জানা খুব জরুরি। প্রায় সব মস্তিষ্কের টিউমারে কিছু সাধারণ লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন শরীরের কোনো দিক দুর্বল হয়ে যাওয়া—
♦ মাথা ব্যথা
♦ খিঁচুনি
♦ বমি হওয়া (সাধারণত সকালবেলা হয়)
♦ দৃষ্টির সমস্যা
♦ আচরণগত পরিবর্তন।
আবার মস্তিষ্কের জায়গাভেদে আরো কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলো দেখে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন মস্তিষ্কের কোথায় টিউমার হয়েছে।
শিশুদের ক্ষেত্রে বমি, খিঁচুনির পাশাপাশি মস্তিষ্কের মধ্যে পানি জমে, যাকে হাইড্রোসেফালাস বলে। মস্তিষ্কের টিউমার হলে ভয় না পেয়ে তাকে সচেতনভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এ জন্য লক্ষণ প্রকাশ পেলে দেরি না করে নিউরোসার্জনের বা নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
রোগ নির্ণয়
মস্তিষ্কের টিউমার নির্ণয়ে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় তার মধ্যে রয়েছে কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটিস্ক্যান, অথবা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং বা এমআরআই। পরবর্তী সময়ে বায়োপসির মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল অনুসারে টিউমারটি কী পরিমাণে ক্ষতি করতে পারে তার আভাস পাওয়া যায়।
চিকিৎসা
মস্তিষ্কের টিউমারের নানা ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে প্রথমত, স্টেরয়েড ব্যবহার করা হয়। এটা দিলে টিউমারের চারপাশের পানি কমবে এবং ব্রেনের ওপর চাপ কমে যাবে। দ্বিতীয়ত, খিঁচুনির জন্য অ্যান্টিকনভালসেন্ট ব্যবহার করা হয়। বাচ্চাদের অনেক সময় ভিপি সান্ট করে ব্রেনের জমা পানি পেটের সঙ্গে কানেকশন করে দেওয়া হয়।
বেনাইন টিউমারগুলো সাধারণত অপারেশন করলে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু বিপদ হচ্ছে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার নিয়ে। কারণ এগুলো অপারেশন করার পরও আবার হতে পারে। তাই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে নিয়মিত ফলোআপে থাকতে হয়। ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে অপারেশন করতে হবে এবং পরবর্তী সময়ে আরো কিছু চিকিৎসা নিতে হবে।
চিকিৎসাপদ্ধতিগুলোর মধ্যে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি অন্যতম। প্রোটন থেরাপি নামের চিকিৎসাপদ্ধতিটি এ ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ভয় না পেয়ে মস্তিষ্কের টিউমার সম্পর্কে জানতে হবে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। তাই লক্ষণ প্রকাশ পেলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মস্তিষ্কের টিউমার নিয়ে সমাজের সব স্তরে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। বর্তমানে দেশে মস্তিষ্কের টিউমারের সব চিকিৎসাপদ্ধতি রয়েছে। ঠিক সময়ে চিকিৎসায় বাঁচায় শত প্রাণ।