এবার চাঁদে পা রাখবে নারী, নতুন স্পেসস্যুটের ছবি দেখাল নাসা

Cape Canaveral: An astronaut suit at the NASA Kennedy Space Center in Cape Canaveral Florida USA. It is part of a region known as the Space Coast, and is the site of the Cape Canaveral Air Force Station. Many U.S. spacecraft have been launched from both the station and the Kennedy Space Center on adjacent Merritt Island

১৯৭২ সালে শেষবার চাঁদে পা রেখেছিল মহাকাশচারীরা। এরপর কেটে গেছে পঞ্চাশ বছর। আবার চাঁদে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে নাসা। কোন পোশাক পরে চাঁদে পাড়ি জমাবে মহাকাশচারীরা। সম্প্রতি সেই পোশাকের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। নাসা এবং টেক্সাস-ভিত্তিক কম্পানি ‘অ্যাক্সিওম স্পেস’ নতুন এই স্পেসস্যুটের নকশা প্রকাশ করেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে এই স্যুট পরেই চাঁদে পা রাখবেন প্রথম কোনো নারী।  

অ্যাক্সিওম স্পেস সংস্থাটি মহাকাশচারীদের চাঁদে যাওয়ার জন্য যে পোশাক তৈরি করেছে, তা পরে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন মহাকাশচারীরা। এমনই দাবি করা হয়েছে সংস্থার পক্ষ থেকে। বুধবার স্পেস সেন্টার হিউস্টনে অ্যাক্সিওম স্পেস এই স্পেসস্যুট উন্মোচিত করে। সংস্থাটি বলেছে, গ্রীষ্মের শেষের দিকে মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য স্পেসস্যুট সরবরাহ করা হবে। কম্পানিটি স্যুট তৈরির জন্য গত বছর নাসার সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল।

তবে মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য ভিন্ন রঙের পোশাক দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা। চাঁদে দীর্ঘ সময় কিভাবে কাটানো যায়, সেই পরীক্ষা করতেই আর্টিমিস-৩ মিশন নিয়ে এবার চাঁদে পাড়ি দেবেন মহাকাশচারীরা। 

নাসার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বিল নেলসন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অ্যাক্সিওমের পরবর্তী প্রজন্মের স্পেসস্যুটগুলো শুধু নারীদের চাঁদে হাঁটতে সাহায্যের জন্যই নয়, চাঁদে যাওয়ার ক্ষেত্রে মহাকাশচারীদের সুযোগ অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে এই পোশাক।’

পোশাকটি কালোর ওপর নীল এবং কমলা রং দিয়ে নকশা করা। যা ২০ শতকে যারা চাঁদে পরিধান করেছিল তা থেকে স্যুটগুলো সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতিরিক্ত হিসেবে প্রস্তুতকারী কম্পানির লোগো  লাগানো থাকবে। স্পেসস্যুটগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাক্সিওম একস্ট্রাভেহকুলার মোবিলিটি ইউনিট বা এক্সিমু।’ 

সংস্থার তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘মহাকাশচারীরা যাতে দীর্ঘ সময় চাঁদের মাটিতে থাকতে পারেন, তার জন্য পোশাক বানানোর ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। চাঁদের মাটিতে উচ্চ তাপমাত্রার হাত থেকে মহাকাশচারীদের রক্ষা করার জন্য তাদের পোশাক সাদা রঙের করা হতো আগে। যাতে সেই পোশাক তাপ প্রতিফলন করতে পারে। তবে নতুন পোশাকের নকশায় পোশাকের ওপরের স্তরটি এমন করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে পোশাকের রং যা-ই হোক না কেন, তা তাপ প্রতিফলন করতে পারবে।’

এক সাংবাদিক বৈঠকে অ্যাক্সিওম স্পেসের এক কর্মীকে সেই পোশাক পরিয়ে পোশাকের স্বাচ্ছন্দ্য কতখানি তা দেখানো হয়েছে। সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পোশাকের রং পরে পরিবর্তিত হতে পারে।

নাসার চন্দ্রাভিযান ‘আর্টেমিস-৩ মিশনের জন্য বিশাল আয়োজন চলছে। এই মিশনের পাঁচটি ভাগ রয়েছে। যার মধ্যে মানুষ নিয়ে চাঁদে ল্যান্ড করার পরিকল্পনাও আছে। আর্টেমিস-৩ মিশনে একজন নারী ও একজন পুরুষ নভোচারী নিয়ে চাঁদে যাবে নাসার রকেট।

চাঁদের কক্ষপথে প্রথম ‘লুনার স্পেস স্টেশন’ বানাচ্ছে নাসা। এই প্রকল্পের নাম ‘গেটওয়ে টু মুন’ বা ‘আর্টেমিস’। পৃথিবীর জোরালো মাধ্যাকর্ষণ বল কাটিয়ে মহাকাশযানকে চাঁদে পাঠানো বেশ কঠিন। লুনার স্পেস স্টেশন হলে সেখানে বসেই গবেষণা চালানো যাবে। আবার মহাকাশযান বানিয়ে যখন-তখন পাঠিয়ে দেওয়া যাবে মহাকাশে। চাঁদে পাড়ি দেওয়ার জন্য স্পেস লঞ্চ সিস্টেম (এসএলএস) রকেট বানিয়েছে নাসা। 

এই প্রগ্রামের ম্যানেজার জন হানিকাট বলেছেন, আর্টেমিস-১ মিশনের পর থেকে পরবর্তী সব কয়টি মিশনই খুব জটিল হবে। চাঁদে মানুষ নিয়ে যাওয়ার বড় পরিকল্পনা আছে। সেটা আর্টেমিস-৩ মিশন। লুনার স্টেশনের কাজও শেষ করতে হবে। তাই এমন রকেট দরকার ছিল, যা উন্নত প্রযুক্তির ও শক্তিশালী হবে। সে জন্যই এসএলএস রকেট তৈরি করা হয়েছে। 

সব কিছু ঠিক থাকলে ২০২৫ সালে আর্টেমিস-৩ মিশনে চাঁদে পা রাখবেন কোনো নারী নভোচারী। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত নাসার অ্যাপোলো মিশনে মোট ১২ নভোচারী চাঁদের মাটিতে পা রাখেন। তারা সবাই ছিলেন পুরুষ। এখন পর্যন্ত নাসার মোট ৭৫ জন নারী নভোচারী মহাকাশে গেছেন।

সূত্র : আনন্দবাজার, দ্য ওয়াল, সিএনএন

LEAVE A REPLY