কী বলছে আন্তর্জাতিক আইন, প্রেপ্তার হবেন পুতিন?

শুক্রবার (১৭ মার্চ) তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক আদালত। ইউক্রেনের হামলার জেরে পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। আইসিসি বলেছে, ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর পুতিন যুদ্ধের আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘন করেছেন। ইউক্রেনের শিশুদের জোরপূর্বক রাশিয়ায় নিয়ে গেছেন। 

কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট কি সত্যিই গ্রেপ্তার হবেন? নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগ শহরে চলবে মামলা? তাকে কি আদৌ গ্রেপ্তার বা বিচারের সম্মুখীন করতে পারবে আইসিসি? 

রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘রাশিয়া রোম সংবিধির আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কোনো সদস্য নয় এবং এর নির্দেশ মানার জন্য বাধ্য নয়। রাশিয়া এ আদালতকে কোনো সহযোগিতা করে না। আন্তর্জাতিক আদালত থেকে আসা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আইনগতভাবে আমাদের কাছে ভিত্তিহীন।’

আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সরকারি আইনজীবী করিম খান জানিয়েছেন, এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কারণে দেশের বাইরে যেতে পারবেন না পুতিন। বিশ্বের ১২৩টি দেশের যেখানেই পুতিন যাবেন, সেখানেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে।

যদিও বিষয়টি এতটা সহজ নয়। কারণ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মতো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইনগত জটিলতা আছে বলে দাবি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের। তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের সদস্য নয় রাশিয়া। ফলে এটা করা রীতিমতো কঠিন। এদিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করাতে ইউক্রেন খুশি হলেও ইউক্রেনও কিন্তু এই আদালতের সদস্য নয়। তবে যদি কারো ওপর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকে, তবে ওই ব্যক্তিকে নিজ দেশ থেকেও গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরে তাকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের কাছে হস্তান্তর করতে হয়। কিন্তু এখানেও আছে আইনগত জটিলতা।

আবার রাশিয়ার বাইরে পা রাখলেই যে পুতিন গ্রেপ্তার হবেন এমনটাও কিন্তু নয়। কারণ কোনো দেশকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত জোর করতে পারবেন না।

লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল-এর সহকারী অধ্যাপক সিসিলি রোজ এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘রাশিয়ায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে যুদ্ধাপরাধের জন্য পুতিনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব নয়।’

আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক ভ্রমণের বহু নজির রয়েছে বিশ্বজুড়ে। দারফুর গণহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আইসিসি। কিন্তু এটি তার বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করতে পারেনি। তাই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কার্যকর করতে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলোর ওপর নির্ভর করে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে আইসিসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে সেই রোম সংবিধিতে স্বাক্ষর করেনি রাশিয়া। 

সূত্র : এই সময়
 

LEAVE A REPLY