বি : কাকলী প্রধান
দেহকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে এবং সর্বোপরি ফিট থাকতে দরকার সুস্থ-সবল হাড় গঠন। কিন্তু সঠিকভাবে হাড়ের যত্ন না নেওয়ায় নানা অসুখ বা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অনেককে। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার বা হাড়কে সুস্থ রাখার আছে বেশ কিছু উপায়।
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ‘ডি’
শক্তিশালী হাড়ের জন্য ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ‘ডি’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। হাড় ভালো রাখতে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার; যেমন—দুধ, পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার, সবুজ শাকসবজি, যেমন—ব্রকোলি, বাঁধাকপি, সয়াবিন, মাছ ইত্যাদি বেশি খেতে হবে। আবার পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘ডি’ পেতে সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শ গ্রহণ করা জরুরি। কেননা দেহের প্রয়োজনীয় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ ভিটামিন ‘ডি’ পাওয়া যায় সূর্যালোক থেকে। ভালো হয় প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২-১টার মধ্যে ২০ থেকে ২৫ মিনিট সরাসরি সূর্যালোক গ্রহণ করতে পারলে।
ব্যায়াম করুন
কিছু ব্যায়াম; যেমন—হাঁটা, দৌড়ানো, ভারোত্তোলন ইত্যাদি নিয়মিত করা দরকার। এসব ব্যায়াম হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং হাড়ের রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত প্রোটিন নিন
শক্তিশালী হাড় গঠন ও হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করা অপরিহার্য। প্রোটিনের ভালো উৎসের মধ্যে রয়েছে চর্বিহীন মাংস, মাছ, ডিম এবং উদ্ভিদভিত্তিক উৎস; যেমন—শিম, বাদাম ইত্যাদি।
ধূমপান, মদ্যপান নয়
গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানের সঙ্গে হাড়ের স্বাস্থ্য সরাসরি সংযুক্ত। তবে তা কিভাবে ঘটে, সেটি পরিষ্কার নয়। মনে করা হয়, নিয়মিত ধূমপান করলে অস্টিওব্লাস্টের (এক ধরনের কোষ, যা নতুন হাড় গঠন করে) কার্যক্ষমতা কমে যায় এবং সেটি অস্টিওপোরোসিসের জন্য ঝুঁকির কারণ। তা ছাড়া ধূমপান করলে এক্সোজেনাস ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভেঙে যাওয়া বৃদ্ধি পায়, ওজন কমে যায় এবং সময়ের আগে রজঃনিবৃত্তি হয়ে যায়।
সঠিক ওজন বজায় রাখুন
হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দেহের সঠিক ওজন বজায় রাখতে হয়। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী প্রত্যেকের ওজন কত হবে তার তালিকা রয়েছে। সে অনুযায়ী ওজন বেশি হলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অন্যদিকে যাদের হাড়ের গঠন ছোট, তাদের হাড়ের ভর কম থাকে এবং অস্টিওপোরোসিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
নিয়মিত হাড়ের ঘনত্বের স্ক্রিনিং
হাড় দুর্বল হলে অস্টিওমাইলাইটিস, অস্টিওপোরোসিস হয়, যাতে দেহের হাড়গুলো দুর্বল হয়ে যায় এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বয়স্ক মানুষের মধ্যে হাড় ভাঙার সবচেয়ে সাধারণ কারণ অস্টিওপোরোসিস। বিশেষ করে বয়স্ক নারী ও পুরুষের হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্য নিয়মিত হাড়ের ঘনত্বের স্ক্রিনিং করা উচিত।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
কিছু রোগ; যেমন—ডায়াবেটিস, হাইপারথাইরয়েডিজম, হাইপোথাইরয়েডিজম, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, সিলিয়াক ডিজিজ, ক্যান্সার ইত্যাদি অস্টিওপোরোসিসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনার যদি হাড়ের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ থাকে, তবে হাড়কে শক্তিশালী করতে এবং সুস্থ রাখতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
লেখক
এমবিবিএস, এমএস (অর্থো), এও ফেলো (জার্মানি), চিফ কনসালট্যান্ট ও বিভাগীয় প্রধান
অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগ
ল্যাবএইড হাসপাতাল