ফাইল ছবি
হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার, সোনা চোরাচালানসহ নানা অবৈধ পন্থায় কমপক্ষে দুই শ কোটি টাকা পাচারের মামলায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবু আহাম্মদ ওরফে আবুর জামিন স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী। আদালতে আবেদনের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আবু আহাম্মদকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আগামী ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানি জন্য রাখা হয়েছে।’
২০২০ সালের ১৮ মার্চ সিআইডির উপ পুলিশ পরিদর্শক মো. হারুন উর রশীদ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জাপতনগর এলাকার ফয়েজ আহম্মদ ওরফে বালী সওদাগরের ছেলে আবু আহম্মদ ওরফে আবুসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, বিভিন্ন ব্যাংক হিসেবে আসামিরা সংঘবদ্ধ হুন্ডি (অর্থ পাচার), স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই ও অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসার সর্বমোট ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৮৭ টাকা জমা ও ২৪০ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা উত্তোলন করে মানিলন্ডারিং অর্থাৎ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে নামে-বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক মালিক হয়েছেন।
এ ছাড়া চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ, চাঁদগাও, ফতেহনগর,রাউজান, ফটিকছড়িতে জমি ও বাড়ির মালিক হয়েছেন। দুবাইয়ে তার ২/৩টি দোকান রয়েছে। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা রয়েছে।
এ মামলায় গত বছর ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে আগাম জামিন চান আবু আহাম্মদ। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের পর ২২ ফেব্রুয়ারি আবু আহম্মদ আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন।
ওইদিন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত মামলার নথি তলব করে ৫ মে আবেদনটি শুনানির জন্য রাখেন। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে নথি না আসায় আদালত ১৩ জুলাই জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য রাখেন। ওই তারিখেও নথি না আসায় ৩১ আগস্ট নথি উপস্থাপন করার নির্দেশ দিয়ে আদালত ৫ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ দেন।
পরে নথি আসলেও আবু আহম্মদের সময় আবেদনের কারণে জামিন আবেদনের শুনানি আরো কয়েকবার পেছানো হয়। গত বছর ১৩ নভেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির দিন আবু আহম্মদ ফের সময় আবেদন করলে আদালত তা না মঞ্জুর করে আবুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
ওই দিনের আদেশে আদালত বলেন, গত নয় মাস যাবৎ জামিন শুনানি না করে আসামি সময়ের দরখাস্ত করে আসছেন। যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং উচ্চ আদালতের আদেশ অবমাননার শামিল।
এরপর আসামি আবু আহম্মদ হাইকোর্টে হাজির হয়ে আগাম জামিন চান। গত বছর ৫ ডিসেম্বর সে আবেদনের শুনানির পর ৬ ডিসেম্বর আদেশর জন্য রাখেন আদালত। কিন্তু ওইদিন আবু আহম্মেদ আদালতে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদনটি ‘নট প্রেসড’ (উত্থাপিত হয়নি বলে খারিজ) করাতে চান। আবু আহম্মদের এমন আচরণে আদালত উষ্মা প্রকাশ করে আবু আহম্মদকে হাজির হতে নির্দেশ দেন। তারপরও হাজির না হওয়ায় আদালত তার দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যেকোনো মূল্যে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন। আর আবু আহমেদের আগাম জামিনের তদবিরকারক নূর মোহাম্মদকে নির্দেশ দেওয়া হয় আবু আহমেদকে নিয়ে ৮ জানুয়ারি আদালতে হাজির থাকতে।
সে নির্দেশ মতো গত ৮ জানুয়ারি আবু আহম্মদকে নিয়ে আদালতে হাজির হলে আদালত তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল এ মামলায় হাইকোর্ট তাকে তাকে জামিন দিয়েছিলেন।