মসজিদের জমি আত্মসাৎ মামলার পর এবার খেপুপাড়া সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা হয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মামলায় বিবাদী করা হয়েছে সাবেক অধ্যক্ষ দোলোয়ার হোসেন, অধ্যক্ষ লিয়াকত মোল্লা, উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজারসহ ৪ জন ও অজ্ঞাত আরও ৮/৯ জনকে। কলেজের সম্পদ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দুদক মহাপরিচালককে (অনুসন্ধান ও তদন্ত) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পটুয়াখালী সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক (ভারপ্রাপ্ত) একেএম এনামুল করিম মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. শাহআলম, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম ও বাদী পক্ষের কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট সহিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে কলেজের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান ২২ মার্চ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে জনস্বার্থে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে এই মামলাটি করেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়, কলেজের উন্নয়নে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে পিআইও ও ডিসি অফিস থেকে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, কলেজ উপাধ্যক্ষ বাসগৃহের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তকরণ প্রকল্পে ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে জেলা পরিষদ, পটুয়াখালী থেকে বরাদ্দ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, অধ্যক্ষের কোয়ার্টার মেরামত ও সংস্কার প্রকল্পে বরাদ্দ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা, কলেজ অডিটোরিয়াম নির্মাণে ২০ লাখ টাকার কাজে অনিয়ম, কলেজের শ্রেণিকক্ষ উন্নয়ন ও আসবাবপত্র মেরামত ও সংস্কারের ২ টন চাল, কলেজ জামে মসজিদ, ছাত্রাবাস, ছাত্রাবাস কিচেন ও শিক্ষক ম্যাস সংস্কার এবং মেরামত প্রকল্পে জেলা পরিষদের বরাদ্দ ৪ লাখ সরকারি অনুদানের টাকা আসামিরা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া পত্রিকায় নিলাম বিজ্ঞপ্তি না দিয়ে ৩ তলা সাইক্লোন সেন্টার ও দ্বিতল টিনশেড ব্যবহারযোগ্য অধ্যক্ষ কোয়ার্টার বিক্রি করে ১৭ লাখ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র ফি’র ৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা, অনার্স শাখার বিভিন্ন বিভাগের ৪০ লাখ টাকা আসামিরা দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন।
মামলায় আরও বলা হয়, কলেজের কৃষি জমি একসনা লিজ দেওয়ার মাধ্যমে ও কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত প্রকৃত অর্থ ব্যাংকে জমা না দিয়ে আংশিক জমা করে অধিকাংশ অর্থ হাতে রেখে আসামিরা এ পর্যন্ত ১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য করে যোগ্যতা না থাকার পরও জাল সনদে অনেক ব্যক্তিকে চাকরি দিয়েছেন, যা মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তের প্রতিবেদনসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে নিয়োগসংক্রান্ত অনিয়মের বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। এভাবে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
এর আগে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সাবেক এমপি মাহবুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালত। এ ছাড়া খেপুপাড়া কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের সরকারি অনুদান ও সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগে পটুয়াখালী সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত, দুদক মহাপরিচালককে (তদন্ত ও অনুসন্ধান) তদন্তের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান বলেন, আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, যাতে আগামী নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন না পাই।