কোরবানি সামনে রেখে গরু পালনে তোড়জোড় খামারিদের

আগত কোরবানির ঈদে গরুর উৎপাদন চাহিদার সমপরিমাণ রাখতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দেওয়া হয়েছে খামারিদের নানা প্রণোদনা। দেশের উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে বগুড়া, জয়পুরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গরু উৎপাদনে তোড়জোড় শুরু করেছেন খামারিরা। 

তাদের প্রত্যাশা, পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ রাখা গেলে উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তা ছাড়া দেশের প্রান্তিক পর্যায় থেকে গরু নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে শহরাঞ্চলে যাতায়াত ও গরুর হাটগুলোতে হয়রানি বন্ধ থাকলে বছরজুড়ে গরু পালনে পরিশ্রম সার্থক হবে। পরবর্তী সময়ে গরু পালনে উৎসাহিত হবেন তারা। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ অঞ্চলে খেটে খাওয়া প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রতিটি ঘরে ঘরে দুই থেকে পাঁচটি পর্যন্ত গরু লালন-পালন করছে। এতে করে বেকার সমস্যার যেমন সমাধান হয়েছে, তেমনি তাদের চলমান আর্থিক সংকটও অনেকটা নিরসন হচ্ছে।

বগুড়ার শিবগঞ্জের উটখোর গ্রামের খামারি তোফাজ্জল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার খামারে কোরবানিতে বিক্রি করার উপযোগী ২২ থেকে ২৩টি গরু আছে। একেকটির সর্বনিম্ন মূল্য দুই থেকে তিন লাখ, সর্বোচ্চ ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এবার কোরবানিতে গরুর ভালো মূল্য না পেলে সর্বনাশ হবে। তবে ভারত থেকে চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ থাকলে আমরা ছোট খামারিরা উপযুক্ত মূল্য পাব। তা ছাড়া গরুর খাবার ও পালনের জন্য অন্যান্য উপকরণের যে হারে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে গরুর উপযুক্ত মূল্য না পেলে পরবর্তী বছর থেকে গরু পালন বন্ধ করতে হবে। 

একই উপজেলার পার্শ্ববর্তী গ্রামের নূর মোহাম্মদ নামের এক খামারি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে দশটি গরু লালন-পালন করছি। গরুর স্বাস্থ্যগত ও খাবারের পরিচর্যা করতে গিয়ে আমাদের পরিবারের সদস্যরা নির্ঘুম সময় পার করছি। সে অনুযায়ী কোরবানির আগে বাজারমূল্য না পেলে আমরা খুদে খামারিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। এ সময় বেশ কয়েকজন খামারি কোরবানির বাজারব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান। 

বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মোসাম্মাৎ নাসরিন পারভিন কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে গরুর মূল্য বেশি। ফলে খামারিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরু উৎপাদনের যথেষ্ট চেষ্টা চালাচ্ছে। নিরাপদ মাংস উৎপাদনে সরকারিভাবে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ ও চিকিৎসা উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। এ কারণে যে পরিমাণ গরু এই অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে, তাতে দেশের চাহিদা দেশীয় গরু দিয়েই মেটানো সম্ভব। 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, দেশীয় গরুর মাংসের উপযুক্ত মান ধরে রাখতে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক কার্যক্রম চলমান আছে। এর মাধ্যমে কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এমনকি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গরু পালন হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করা হয়। এতে করে মানসম্পন্ন কোরবানির পশু উৎপাদনে যথেষ্ট ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। 

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, সারা দেশে শুধু কোরবানির পশুই নয়, দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নির্দেশনা নিয়ে দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক বড় কোনো দুর্যোগ না হলে আগামী কোরবানিতে দেশি পশু দিয়ে দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

LEAVE A REPLY