বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অল্প কয়েক দিনের মধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা এবং নতুন কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে। দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেছেন, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের পথরেখার প্রথম ধাপে এই ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যে সরকার পতনের লক্ষ্যে দেওয়া ১০ দফা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখার সমন্বয়ে একটি যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো এক মঞ্চ থেকে এই ঘোষণা দেবে। যৌথ ঘোষণার ভিত্তিতে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। এই কর্মসূচি ধরে বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চায়।
বিএনপি নেতারা জানান, এসএসসি পরীক্ষার কারণে কর্মসূচি ঘোষণার ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতিতে এগোচ্ছেন তাঁরা। পরীক্ষা শেষ হওয়ামাত্রই চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে কর্মসূচি শুরু হতে পারে।
যৌথ ঘোষণা ও নতুন কর্মসূচির বিষয়ে স্থায়ী কমিটির গত কয়েকটি বৈঠকের আলোচনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সোমবারের বৈঠকেও প্রায় দুই ঘণ্টা বিচার-বিশ্লেষণ চলে। স্থায়ী কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এই দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা জানান, যৌথ ঘোষণার পর এ মাসে নতুন কর্মসূচি নয়ে মাঠে নামবে দল। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো আন্দোলনে গতি আনা। এ বিষয়ে দলের বেশির ভাগ নেতা ও শরিক দলগুলোর নেতারা রোড মার্চের মাধ্যমে আন্দোলন শুরুর পক্ষে মত দেন। কয়েকজনের মত, বৃহত্তর ১৯ জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে বড় সমাবেশ করার পর রোড মার্চ করলে আন্দোলনে গতিসঞ্চার হবে।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও বিএনপি সমর্থক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মতামত নিচ্ছেন। আগামীকাল ৪ মে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এরই মধ্যে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের মতামত নিয়েছেন দলের লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এসব মতামত বিবেচনায় নিয়ে স্থায়ী কমিটির পরবর্তী সভায় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে।
সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে নেতাদের কয়েকজন বলেন, গত কয়েক মাসে বিএনপি প্রায় সব ধরনের কর্মসূচি পালন করেছে। তাই এবার এমন কর্মসূচি দিতে হবে, যাতে আন্দোলনে গতি আসে।
স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে নেতাদের অনেকে রোড মার্চের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা উত্থাপন করেন। তবে ঢাকামুখী রোড মার্চ হবে, নাকি ঢাকা থেকে বিভাগীয় পর্যায়ে কিংবা মহানগর পর্যায়ে রোড মার্চ যাবে; সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই লক্ষ্যে ঈদুল আজহার আগেই আন্দোলনের শক্ত ভিত্তি তৈরি করতে চায় দলটি। আন্দোলন অযথা টেনে দীর্ঘমেয়াদি করতে চান না নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংকট সমাধানে সরকারের আন্তরিকতা নেই। তাই সেই আন্দোলন সফল করতে খুব শিগগির যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা ও ভিন্নধর্মী নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করে যুগপৎ আন্দোলনের যৌথ ঘোষণা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ১০ দফা অটুট রেখে অন্যান্য দলের দাবিগুলো সংযুক্ত করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে দলগুলো কী করবে, তার একটি যৌথ রূপরেখাও তুলে ধরা হবে। বিএনপি এরই মধ্যে ২৭ দফার রূপরেখা ঘোষণা করেছে। এ দফার সঙ্গে অন্যান্য দলের প্রস্তাবগুলো সংযুক্ত করা হচ্ছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
সমমনা দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে এক মঞ্চ থেকে যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে। কবে এই ঘোষণা আসবে, তার দিনক্ষণ খুব শিগগির চূড়ান্ত করা হবে।
যৌথ ঘোষণার বিভিন্ন দফা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির কিছুটা মতপার্থক্য ছিল। গতকাল মঙ্গলবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দল মতপার্থক্য কমিয়ে এনেছে। যৌথ ঘোষণার বিষয়ে একমত হয়েছেন দুই দলের লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব দল মিলে যৌথ ঘোষণা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। খুব দ্রুত এই ঘোষণা দেওয়া হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘আমরা অল্প কয়েক দিনের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিএনপিসহ অন্যান্য দল নিয়ে আগামী দিনের বাংলাদেশ কেমন হবে, সেটার রূপরেখা যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে তুলে ধরব। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে।’