ভারতের মণিপুরে অশান্তির খবরে উদ্বেগ প্রকাশ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা থেকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর। ছবি : পিটিআই
সহিংসতায় বিধ্বস্ত ভারতের মণিপুর রাজ্যে চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ জারি করল রাজ্য সরকার। রাজ্যপালের স্বীকৃতি পাওয়া সরকারি ওই নির্দেশে চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে, যখন আর কোনো উপায় কাজে আসবে না, সেই সময় দেখামাত্র গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মণিপুরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নেমেছে সেনাবাহিনীর ৫৫টি প্লাটুন।
এদিকে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্যোগী হয়ে শান্তি ফেরানোর আরজি জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বেগ জানিয়ে টুইট করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও।
মণিপুর হাইকোর্টের একটি রায়কে কেন্দ্র করে আগুন জ্বলছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় এই রাজ্যে। সেনা নামিয়েও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে মণিপুরের রাজ্যপাল সমস্ত জেলা শাসক, সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটদের চূড়ান্ত পরিস্থিতিতে দেখামাত্র গুলি চালানোর সরকারি নির্দেশে সিলমোহর দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবারই সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, সহিংসতা বিধ্বস্ত রাজ্যে তারা ৯ হাজার মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে। আরো বহু মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছিল। পরে এদিন দুপুর নাগাদ ‘শ্যুট অ্যাট সাইট’ নির্দেশ জারি করে সরকার।
মণিপুরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরাও। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে টুইট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি লিখেছেন, ‘মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটা রাজনীতি করার সময় নয়। রাজনীতি এবং নির্বাচন অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু এখন সর্বপ্রথম মণিপুরকে রক্ষা করতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে মণিপুরকে দেখার আর্জি জানাচ্ছি। শান্তি ফেরানোর আহ্বান করছি।’
এ ছাড়াও মণিপুরের বাসিন্দাদেরও শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি টুইটে লিখেছেন, ‘আজ যদি আমরা মনুষ্যত্বকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিই তা হলে আগামীকাল মানুষও অবশিষ্ট থাকবে না।’
মণিপুরের পরিস্থিতির দিকে প্রধানমন্ত্রীকে নজর দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। কংগ্রেসের দাবি, মণিপুরের অবস্থা ভুলে মোদি ও বিজেপি কর্ণাটকে নির্বাচনে জেতায় মগ্ন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও টুইটে রাজনীতি এবং ভোটের ঊর্ধ্বে ওঠার আবেদন জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মমতা সরাসরি কারো নাম না করলেও তার ইঙ্গিত সম্ভবত কর্ণাটকে বিজেপির নির্বাচনের প্রচারের দিকেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবারই মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এ বীরেন সিংহের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
গত বুধবার চূড়াচাঁদপুর জেলার তোরবাঙে অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন মণিপুর (এটিএসইউএম) আদিবাসী সংহতি পদযাত্রার ডাক দেয়। সম্প্রতি হাইকোর্ট মণিপুরের মেইতেই সম্প্রদায়কে তফসিলি উপজাতিভুক্তদের তালিকায় আনা যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের সেই নির্দেশের বিরোধিতায় নেমেছে এটিএসইউএম। বুধবারের সুবিশাল এক পদযাত্রা থেকে নতুন করে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে থাকে। পরিস্থিতি সামলাতে প্রথমে জারি হয় কারফিউ। কিন্তু তাতেও সহিংসতায় লাগাম পরানো যায়নি। বৃহস্পতিবার রাস্তায় নামে সেনাবাহিনী। তার পরই এলো পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখামাত্র গুলির নির্দেশ।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
