একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতি ইসলামির যুদ্ধাপরাধের বিচারে একই কথা শুনিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি সংশোধেনের প্রক্রিয়া চলছে।
শনিবার রাজধানীর বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জ্যেষ্ঠ সহকারী জজদের ১৪৮তম রিফ্রেশার কোর্সের উদ্ধোধন করেন আনিসুল হক। এ অনুষ্ঠানের পর জামায়াতে ইসলামির বিচার নিয়ে আইনমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। মুক্তিযুদ্ধে দলটির যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সরকারের অন্তরিকতার ঘাটতি আছে কিনা, জানতে চাইলে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এটা (সরকারের আন্তরিকতা) মনে হওয়া তো আমাদের জন্য দুঃখের। তার কারণ হচ্ছে এই সরকারই কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করেছে। তারা (যাদের বিচার হয়েছে) কিন্তু জামায়াতের হোতা ছিল। জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা ছিল। তারপরও যদি মনে করা হয় যে, আমরা (জামায়াতের বিচারে) উদ্যোগী নই, সেটা দুঃখজনক।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে (জামায়াতে ইসলামির) মানবাধিকার লংঘনের বিচারের জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি যথেষ্ট নয়। এটা সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে।’
বিভিন্ন সময় দল, সংগঠন, ব্যক্তির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা জামায়াতে ইসলামির যুদ্ধাপরাধসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দাবি জানিয়েছেন। এমন দাবির মুখে প্রতিশ্রুতি দিতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য এমনকি মন্ত্রীদেরও।
এক পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার শুরুর পর ২০১৩ সালের আগস্টে জামায়াতে ইসলামীর অপরাধের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়। পরের বছর ২৫ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্তও করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ -এ সংগঠনের বিচার ও শাস্তির বিধান নেই।
এ অবস্থায় ২০১৪ সালেই আইন মন্ত্রণালয় অপরাধী সংগঠনের শাস্তির বিধান রেখে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। প্রস্তাবিত ওই সংশোধনীতে ট্রাইব্যুনালস আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ‘ব্যক্তি’ শব্দটির পর ‘অথবা সংগঠন’ সন্নিবেশ করা হয়।
আরেকটি ধারায় ‘দায়’ শব্দটির সঙ্গে ‘অথবা সাংগঠনিক দায়’ এবং আরেকটি ধারায় ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি’র পাশাপাশি ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি বা সংগঠন’ শব্দ যোগ করার কথা বলা হয় প্রস্তাবিত সংশোধনীতে। এ ছাড়া সংগঠন হিসেবে দোষী প্রমাণিত হলে ওই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান রাখারও প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু প্রায় নয় বছর আগে আইনটির প্রস্তাবিত সংশোধনী আর মন্ত্রীসভায় ওঠেনি। যে কারণে সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচারও সম্ভব হয়নি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার বিভাগকে সবধরণের সহযোগিতা দিতে সরকারের কোন কার্পণ্য থাকবে না। কিন্তু বিচার বিভাগের কাছে একটি চাওয়া থাকবে, সেটি হচ্ছে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ যেন দ্রুত ন্যায়বিচার পায় এবং তারা যেন মামলার দীর্ঘসূত্রতার অবস্থান থেকে পরিত্রান পায়।’
প্রশিক্ষণার্থী বিচারকদের বিচারিক শৃঙ্খলা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রতিষ্ঠত বিচারিক সিদ্ধান্তগুলো (সুপ্রিম কোর্টের রায়, আদেশ, আচরণবিধি) মেনে না চললে জুডিশিয়াল অ্যানার্কি (বিচারিক নৈরাজ্য) তৈরি হতে পারে। নিশ্চয়ই আমরা কেউই এই অ্যানার্কি চাই না। কারণ সমাজ ও দেশে এর (নৈরাজ্যের) ইমপ্যাক্ট (প্রভাব বা প্রতিফলন) হবে ভয়াবহ।
বিচার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।