দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আজ সন্ধ্যায় বা আগামীকাল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এদিকে গতকালও দেশজুড়ে মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল ঢাকার মে মাসের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে প্রথমে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তী সময়ে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
আবহাওয়া অফিস চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব ধরনের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আমি আশঙ্কা করছি যে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা আগামী ১৪ মে (রবিবার) সকাল ৬টার পর থেকে ১৫ মে সকাল ৬টার মধ্যে অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ঘণ্টায় ১৮০ থেকে ২০০ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলার ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করতে পারে।’ তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত তথ্যও এই পূর্বাভাসের পক্ষে ব্যবহার করেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট লঘুচাপটি আজ বা কাল গভীর নিম্নচাপ এবং এরপর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আমরা আজ বুধবার বা আগামীকাল আরো নির্দিষ্ট করে বলব ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে।’
আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, গত ৪৪ বছরের মধ্যে গতকালের তাপমাত্রা ছিল মে মাসে ঢাকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মে মাসে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা এখন পর্যন্ত ৪০.৬ ডিগ্রি, যা ১৯৭৯ সালের ৩০ মে রেকর্ড করা হয়।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়, ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গত ৯ বছরের মে মাসের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৪ সালের মে মাসে ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রাজশাহীতে। তবে দেশের ইতিহাসে মে মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৮৯ সালের ৬ মে ঈশ্বরদী, ১৯৯৫ সালের ২৬ মে ও ২৮ মে রাজশাহীতে এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বজলুর রশিদ কালের কণ্ঠকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও পটুয়াখালী জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। আজও দেশজুড়ে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। বজলুর রশিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, শুক্রবার বা শনিবার থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে। ১৩ মে থেকে দেশে বৃষ্টি শুরু হতে পারে।
তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন