সুপার সাইক্লোনের রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা

দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটির গতকাল রাত বা আজ সকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আগেই নির্ধারিত রয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘মোখা’। আগামী রবিবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূলের মধ্য দিয়ে এটি অতিক্রম করতে পারে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। 

এদিকে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক গত রাত সাড়ে ৯টায় কালের কণ্ঠকে জানান, ‘এটি এখনো গভীর নিম্নচাপ হিসেবেই আছে। কাল সকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।’

গ্রাফ

এদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে উল্লেখ করে এটি মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। গতকাল বুধবার আন্ত মন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির সভার শুরুতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী শনিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার ভোরের মধ্যে আঘাত হানতে পারে মোখা। আমরা সব দিক থেকেই প্রস্তুত আছি। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, আনসার ও কোস্ট গার্ড প্রস্তুত আছে।’  

আবহাওয়া অধিদপ্তর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত গভীর নিম্নচাপটি ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর আরো ঘনীভূত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা নাগাদ সিভিয়ার সাইক্লোন বা প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। মধ্যরাত নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। আগামী রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের কক্সবাজার ও মিয়ানমারের উত্তর উপকূল অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।’ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগসহ কক্সবাজার ও আশপাশের অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে বলে জানান তিনি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় তাদের সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানিয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গভীর নিম্নচাপটি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪২০ কিলোমিটার দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।  

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। 

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কার মধ্যে দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, দিনাজপুর, নীলফামারী ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ চলছে। আজও দেশজুড়ে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে আগামীকাল থেকে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে আসতে পারে বলে কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান।

আজ অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। তবে ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। 

LEAVE A REPLY