পাল্টা আক্রমণ চালাতে আরো সময় দরকার : জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই যুদ্ধে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। ছবি : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, রুশ বাহিনীর ওপর তার দেশের পাল্টা আক্রমণ শুরু করার জন্য আরো কিছু সময়ের প্রয়োজন। কারণ তারা এখনো প্রতিশ্রুত সামরিক সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার ওপর পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে রণক্ষেত্রের ফ্রন্টলাইন বদলে যাবে, যা কয়েক মাস ধরে অপরিবর্তিত রয়েছে। যুদ্ধের জয়-পরাজয় নির্ধারণেও ইউক্রেনের এই আক্রমণ বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউক্রেনের জন্যও তা হবে কঠিন এক পরীক্ষা। কারণ এর মধ্য দিয়েই প্রমাণ হবে, কিয়েভ পশ্চিমা দেশের কাছ থেকে যেসব অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামাদির জন্য অপেক্ষা করছে, রণক্ষেত্রে জয়লাভের জন্যে সেগুলো কতটা কাজ করবে।

আমরা ‘প্রস্তুত’
কিয়েভের সদর দপ্তরে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি তার যোদ্ধা বাহিনীকে পাল্টা আক্রমণের জন্য ‘প্রস্তুত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি বলেছেন, এ জন্য তার সেনাবাহিনীর ‘আরো কিছু জিনিসের প্রয়োজন’। এর মধ্যে রয়েছে সাঁজোয়া যান, যেগুলো ধাপে ধাপে এসে পৌঁছচ্ছে।

ইউক্রেনের এসব বাহিনীর কোনো কোনোটিকে ন্যাটো দেশগুলো প্রশিক্ষণ দিয়েছে। ইউরোভিশন নিউজের সদস্য সম্প্রচার মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের কাছে যা আছে সেগুলো দিয়েই আমরা সামনের দিকে যেতে পারি এবং আমি মনে করি, আমরা সফল হতে পারবো। কিন্তু এতে অনেক মানুষ হারাতে হবে। আমি মনে করি এটা গ্রহণযোগ্য হবে না। সে কারণে আমাদের অপেক্ষা করা প্রয়োজন। আমাদের এখনো আরো কিছু সময় দরকার।’

ইউক্রেন কখন ও কোথায় পাল্টা আক্রমণ চালাবে তা গোপন রাখা হয়েছে।

রণক্ষেত্রে রাশিয়ার শক্তিবৃদ্ধি
তবে রুশ বাহিনী ইতিমধ্যে পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক, দনেৎস্ক থেকে দক্ষিণের জাপোরিঝিয়া ও খেরসন পর্যন্ত ৯০০ মাইল দীর্ঘ ফ্রন্টলাইনে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। রাশিয়ার ওপর পাল্টা আক্রমণ চালানোর কথা বললেও ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এ থেকে খুব বেশি কিছু আশা করার কথা বলছে না।

এ মাসের আরো আগের দিকে সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ইউক্রেনের নেতারা ‘বুঝতে পারছেন যে তাদের সফল হতে হবে’। কিন্তু তাদের এই আক্রমণকে ১৫ মাস ধরে চলা যুদ্ধের একমাত্র সমাধান বা ‘সিলভার বুলেট’ হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।

তার পরও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আস্থা প্রকাশ করেছেন, তার সামরিক বাহিনী সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে। তবে তিনি ‘ফ্রোজেন কনফ্লিক্টের’ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, শান্তি চুক্তি বা কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়াই যখন সশস্ত্র যুদ্ধের অবসান ঘটে তখন তাকে ফ্রোজেন কনফ্লিক্ট বলা হয়।

জেলেনস্কি বলেন, ‘রাশিয়া এ রকম পরিস্থিতিই চাইছে।’

কিয়েভের জন্য পরীক্ষা
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, কিয়েভের এই পাল্টা আক্রমণের ফলাফল যদি হতাশাজনক হয়, পশ্চিমা দেশগুলো তাদের সামরিক সাহায্য কমিয়ে দিতে পারে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতার জন্য ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দেওয়ার পর বর্তমানে দেশটির এক-পঞ্চমাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তখন এসব এলাকা ছাড় দেওয়ার ব্যাপারেও কথাবার্তা হতে পারে।

জেলেনস্কি বলেন, ‘প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ধারণা আছে। কিন্তু ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার জন্য তারা চাপ দিতে পারবে না। বিশ্বের কোনো একটি দেশ কেন পুতিনের জন্য তার ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে?’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী বছরের নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারাবে—এই ভীতি উড়িয়ে দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।

তিনি বলেন, ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় দলেরই সমর্থন আছে। ‘যখন নির্বাচন হয়ে যাবে, তখন আমরা কোথায় থাকবো কে জানে। আমার বিশ্বাস এর মধ্যেই আমরা জয়লাভ করব।’

এখন পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার কোনো সম্ভাবনা চোখে পড়ছে না। দুই দেশই বলছে, জয়লাভ না করা পর্যন্ত তারা লড়াই অব্যাহত রাখবে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইতিমধ্যে ১০ দফার এক শান্তি প্রস্তাব দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার দখল করা ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া, যুদ্ধের কারণে ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ এবং রাশিয়ার যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন।

মস্কো এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

LEAVE A REPLY