ঘূর্ণিঝড় মোখা আরো শক্তিশালী হয়ে ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। কিন্তু স্থলভাগে আঘাত করার সময় প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হচ্ছে এটি। আজ রবিবার (১৪ মে) ঘূর্ণিঝড় মোখার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে এক ফেসবুক পোস্টে এমনটিই জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক এই গবেষক লেখেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মানুষের জন্য সুসংবাদ আছে। ঘূর্ণিঝড় মোখার কেন্দ্র যখন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও মিয়ানমারের মংডু জেলার মধ্যবর্তী স্থানের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা শুরু করেছে, সৌভাগ্যক্রমে ঠিক ওই সময়ে সমুদ্রে ভাটার শুরু হয়েছে।
তিনি আরো লেখেন, বঙ্গোপসাগরে প্রতি ৫ থেকে ১০ বছরে ১টা মাত্র সুপারসাইক্লোন সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তিন বছর পর সুপারসাইক্লোন মোখা সৃষ্টি হলো। সৌভাগ্যক্রমে ঘূর্ণিঝড়টি প্রথমে সমুদ্রের মধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়ে; এরপর স্থলভাগে আঘাত করার সময় প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হচ্ছে।
এদিকে আজ রবিবার (১৪ মে) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া ১৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় (১৯.২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১.৮ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি আজ সকাল ৯টায় (১৪ মে) চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বিকেল নাগাদ সিটুয়ের (মিয়ানমার) কাছ দিয়ে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার নদীবন্দরগুলোকে ৪ নম্বর নৌ মহাবিপৎসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৮-১২ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
এ ছাড়া উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা এবং এগুলোর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৭ ফুটের অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারি (৪৪-৮৮ মিমি) থেকে অতিভারি (৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। অতিভারি বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।