নানা কারণে রক্তনালি ব্লক বা হার্ট ব্লক হতে পারে। এর মধ্যে বংশগত কারণ অন্যতম। যদি কারো বাবা বা ভাইয়ের ৫৫ বছর বয়সের আগে এবং মা বা বোনের ৬৫ বছর বয়সের আগে হার্ট অ্যাটাক হয়, তাহলে ধরে নেবেন আপনার বংশগত রক্তনালি ব্লকের সমস্যা আছে। সুতরাং ৩০ বছর বয়সের পর থেকেই চেকআপ করাতে হবে। ধূমপায়ীদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা অনেক। হাইপ্রেসারের রোগীদেরও রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে। তাই প্রেসারের ওষুধ কখনো বাদ দেওয়া যাবে না। বয়সের কারণেও রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে। যাঁরা শর্করাজাতীয় কিংবা মিষ্টিজাতীয় খাবার এবং চর্বিজাতীয় খাবার বেশি খান তাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে গিয়ে রক্তনালি ব্লক হতে পারে। কিছু রোগ আছে যেগুলো শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ তৈরি করে, সেগুলো থেকেও রক্তনালিতে ব্লক হতে পারে।
লক্ষণ
হার্টের রক্তনালিতে ব্লক থাকলে অতি অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠা, বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্টের লক্ষণ দেখা যাবে।
প্রতিরোধে করণীয়
* প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচ দিন ব্যায়াম করতে হবে।
* হার্ট ভালো রাখার জন্য ফলমূল, শাক-সবজি এবং মাছ বেশি খাবেন। বেশির ভাগ মাছই হার্টের জন্য ভালো। গরু ও খাসির মাংস খুবই কম খাবেন। বাদ দিতে পারলেই ভালো।
* রান্নায় তেল খুবই কম ব্যবহার করবেন। কোনো তেলই ভালো না, যদি সেটা পরিমাণে বেশি হয়।
* হার্টের রোগীদের কয়েকটি ওষুধ সারা জীবন খেতে হয়। কার কী ওষুধ প্রয়োজন সেটা নির্ভর করে রোগের তীব্রতার ওপর এবং সেটা আপনার হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ঠিক করে দেবেন।
রোগ নির্ণয়
হার্টের কিছু টেস্ট যেমন : ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইটিটি ও এনজিওগ্রাম করে হার্টের ব্লক বা রক্তনালির ব্লক নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
রক্তনালির ব্লক বা হার্টের ব্লক হলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। প্রথমত, লাইফস্টাইল মডিফিকেশন মানে ব্যায়াম করতে হবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবারদাবার খেতে হবে। দ্বিতীয়ত, নিয়ম মেনে হার্টের ওষুধ খেতে হবে। হার্টের ওষুধ কখনো হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করবেন না অথবা নিজে নিজে বাড়িয়ে খাবেন না। তৃতীয়ত, হার্টের রক্তনালি ব্লকের চিকিৎসা হলো স্টেন্টিং বা রক্তনালিতে রিং লাগানো। হার্টের রক্তনালিতে চর্বি জমে ব্লক হয়ে যায়। হার্টের রক্তনালির ব্লকের স্থানে একটি রিং বসিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়। চতুর্থত, বাইপাস সার্জারি বা ওপেন হার্ট সার্জারি। ব্লকের পরিমাণ এবং সংখ্যা অনেক বেশি হলে অনেক সময় রিং স্থাপন করা সম্ভব হয় না। তাঁদের ওপেন হার্ট সার্জারি করে, ব্লকগুলো বাইপাস করে বিকল্প রক্তনালি তৈরি করে দেওয়া হয়, যাতে রক্ত চলাচল স্বাভাবিকভাবে করতে পারে।
পরামর্শ দিয়েছেন
ডা. গোলাম মোর্শেদ
সহকারী অধ্যাপক (কার্ডিওলজি)
ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট
গ্রিন লাইফ হসপিটাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা