তালগাছে কীটনাশক : আ. লীগ নেতাকে জরিমানা, চাকরিচ্যুতির নির্দেশ

রাজশাহীর বাগমারায় কীটনাশক দিয়ে তালগাছ মেরে ফেলার দায়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহরিয়ার আলমকে চার লাখ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাকে স্থানীয় করখণ্ড দাখিল মাদরাসার শিক্ষকতা থেকে চাকরিচ্যুত করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

আর সড়ক নির্মাণ করতে অন্তত ৩০টি তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির আরো অন্তত ৪০টি গাছের চারা উপড়ে ফেলার অভিযোগে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মহিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী ও ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোবহান হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।

আদেশের অনুলিপি পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের বরখাস্ত করতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দিয়ে আদালত বলেছেন, এসংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তারা বরখাস্ত থাকবেন। 

বৃহস্পতিবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি এ কে এম রবিউল হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চের আলাদা রায় ও আদেশ থেকে এসব নির্দেশনা এসেছে। 

আদালতে শাহরিয়ার আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. জাহিদুল হক জাহিদ। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী ও ওয়ার্ড সদস্য মো. সোবহান হাওলাদারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ওয়ায়েস-আল-হারুনী। আর গাছের চারা উপড়ে ফেলার খবরটি নজরে আনা আইনজীবী শেখ মো. সোহেল এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আইন কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, শাহরিয়ার আলমকে যে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে, তা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে বলেছেন আদালত। ওই কৃষি কর্মকর্তা এ টাকা দিয়ে বেঁচে যাওয়া তালগাছগুলোর পরিচর্যার পাশাপাশি মরে যাওয়া তালগাছগুলোর জায়গায় নতুন করে গাছ লাগাবেন। সেই সঙ্গে রুল নিষ্পত্তি করে দেওয়া এ রায়ের অনুলিপি আওয়ামী লীগের জেলা কমিটিতে পাঠাতে বলেছেন, যাতে দলীয়ভাবেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

বাগমারায় উপজেলার সড়কের তালগাছে বিষ প্রয়োগ করে মেরে ফেলা নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আসে। বিষ প্রয়োগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও করখণ্ড দাখিল মাদরাসার শিক্ষক শাহরিয়ার আলমের নাম আসায় তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও কৃষি কর্মকর্তাকে যৌথভাবে ঘটনার সরেজমিন তদন্তের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া অর্ধশতাধিক তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগের জন্য শাহরিয়ারের কাছ থেকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ আদায় ও তার বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে রুল জারি করা হয়। গত ১২ ফেব্রুয়ারি সে তলবে হাজির হয়ে শাহরিয়ার আলম তালগাছে কীটনাশক প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু তদন্তে তার আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলে। এরপর রুল শুনানি করে রায় দিলেন হাইকোর্ট।

অন্যদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মহিপুর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামের সড়ক নির্মাণের কাজে অন্তত ৩০টি তালগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা উপড়ে ফেলা নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকীয় গত ৭ মে আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী শেখ মো. সোহেল। সেদিন আদালত চারা গাছ উপড়ে ফেলার ব্যাখ্যা জানতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মহিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ফজলু গাজী ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সোবহান হাওলাদারকে তলব করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তাদের হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

আর এ ঘটনায় কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে সেদিন বন রেঞ্জ কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তাকেও আসতে বলেন আদালত। সেই সঙ্গে কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নির্দেশ দেন আদালত। ঘটনার ছবিসহ প্রতিবেদন নিয়ে তাকেও আদালতে থাকতে বলা হয়।

নির্দেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্টরা আদালতে হাজিরের পর এ বিষয়ে শুনানি করে চেয়ারম্যান ফজলু গাজী ও ওয়ার্ড সদস্য সোবহান হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন হাইকোর্ট।

এ আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনজীবী শেখ মো. সোহেল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থানীয় দুই জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করার নির্দেশের পাশাপাশি পশ্চিম নজিবপুর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকৌশলীকে আসতে বলেছেন আদালত। চারা গাছ উপড়ে ফেলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত তিনি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, সে ব্যাখ্যা জানতেই তাকে হাজির হতে বলা হয়েছে।’ আগামী ৩০ মে পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে আদালত এ আদেশ দেন বলে জানান এ আইনজীবী। 

LEAVE A REPLY