নীরব ভোটে জায়েদার জয়

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নিরব ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. আজমত উল্লা খানকে ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে তিনি এ জয় পান। টেবিল ঘড়ি প্রতীকে তিনি পেয়েছেন দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। অপরদিকে আজমত উল্লা খান নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন দুই লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট। বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৩০ মিনিটে নগরীর বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে বেসরকারি এ ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম। ফল ঘোষণার সময় জায়েদা খাতুন সেখানে ছিলেন না। তবে তার ছেলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ভূমিকম্পে মাটির নিচে চাপা পড়ার পর উঠে আসলে যে অনুভূতি হয়, এ বিজয়ে তেমনি অনুভূতি হচ্ছে। তিনি বলেন, মায়ের পাশাপাশি আমিও গাজীপুরের উন্নয়নে কাজ করব। এ ফল গাজীপুরবাসীর বিজয়। 
এ নির্বাচনে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ জন। এর মধ্যে ভোট বাতিল হয়েছে এক হাজার ৭৯৪টি। ভোট পড়ার হার ৪৮.৭৫ শতাংশ। অন্য মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান হাতপাখা প্রতীকে ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট, জাতীয় পার্টির এমএম নিয়াজ উদ্দিন লাঙ্গল প্রতীকে ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট ও গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম মাছ প্রতীকে ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট পেয়েছেন। এ ছাড়া জাকের পার্টির মো. রাজু আহম্মেদ গোলাপ ফুল প্রতীকে ৭ হাজার ২০৬ ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম হাতি প্রতীকে ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট ও মো. হারুন-অর-রশীদ ঘোড়া প্রতীকে ২ হাজার ৪২৬ ভোট পেয়েছেন। 
ফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সন্ধ্যা থেকেই বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের সামনের সড়কে টানটান উত্তেজনা দেখা দেয়। এক পাশে আজমত উল্লা খানের সমর্থক ও অন্য পাশে জায়েদা খাতুনের সমর্থকরা নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে স্লোগান দেন। দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কায় সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন ছিল। রাত দেড়টায় যখন ফলাফল ঘোষণা করা হয় তখন সেখানে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা ছিলেন না। ফল ঘোষণার পর টেবিল ঘড়ি সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। 
এ ফলের মধ্য দিয়ে প্রথম কোনো নারী মেয়র পেলেন গাজীপুরবাসী। জায়েদা খাতুন গৃহিণী থেকে নগরের অভিভাবকের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। মূলত জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল হওয়ায় মাকে সামনে নিয়ে আসেন তিনি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর আলমের জনপ্রিয়তাই মাকে জয়ী করল।
এর আগে বড় ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। সকাল থেকেই বিপুলসংখ্যক ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে যান। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষার পরও ভোট দেন গাজীপুরবাসী। তবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটের গতি ছিল শ্লথ। এ কারণে বিকাল ৪টার পরও অনেকে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। অনেক কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট ভোটারদের সহায়তার নামে গোপন কক্ষে গিয়ে নিজেরাই ভোট দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া একটি কেন্দ্রের দুটি কক্ষের এজেন্টদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। 
সরেজমিন দেখা গেছে, কেন্দ্রে কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রতীকের ব্যাজ পরেই নিজেদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন। তবে জায়েদা খাতুনের কর্মীদের মাঠে পাওয়া যায়নি। নগরীর কোথাও জায়েদা খাতুনের পোস্টারও দেখা যায়নি। তবে অনেকেই নৌকা ব্যাজ পড়ে দেওয়াল ঘড়িতে ভোট দিয়েছেন। 
এ নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোটকেন্দ্রের ভেতর ও বাইরে নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগ রয়েছে। সরকারি দলের নেতাকর্মীদের কেউ কেউ কেন্দ্রে গোপনকক্ষে গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে ভোটারদের বাধ্য করেন। আবার কোথাও তারা নিজেরাই গোপন কক্ষে গিয়েই ভোট দিয়ে আসেন। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেট কয়েকজনকে আটক করেন। এর বাইরে কয়েকটি কেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ নির্বাচনে সবকটি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের পোলিং এজেন্ট ছিল। অনেক কেন্দ্রে লাঙ্গল ও হাতপাখা প্রতীকের এজেন্ট পাওয়া গেছে। দু-কয়েকটি ছাড়া কোনো কেন্দ্রেই জায়েদা খাতুনের পোলিং এজেন্ট ছিল না। 
বেশিরভাগ কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের এজেন্ট না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল সকালে আজমত উল্লা খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি তো কোনো প্রার্থীর এজেন্ট দিতে পারব না। যারা এজেন্ট দিতে পারেনি তারাই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি বলতে পারি, ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট আসতে কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, কোনো প্রার্থী যদি এজেন্ট দিতে না পারেন, তাহলে আমি তো সেই দায়িত্ব নেব না।
বৃহস্পতিবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, ৫৬টি সাধারণ কাউন্সিলর ও ১৯টি সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটগ্রহণ হয়। নির্বাচনে মেয়র পদে আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 
ভোটগ্রহণ শুরুর পর টঙ্গীর আরিচপুর মসজিদ রোডের দারুস সালাম মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান। সকাল ৯টায় ভোট দিয়ে জয়ের বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন তিনি। আজমত উল্লা খান বলেন, স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসেছেন। গাজীপুরে জনগণের অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। আমার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। সব সময়ই আমি জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। জনগণ যাকে নির্বাচিত করবে আমি সেই রায় অবশ্যই মেনে নেব। তিনি বলেন, জয়-পরাজয় আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। ফয়সালা আসমান থেকে হয়, এটা আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। অপরদিকে সকাল সাড়ে ১০টায় ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন জায়েদা খাতুন। এ সময় তার সঙ্গে ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও ছিলেন। তারা দুজনই ওই কেন্দ্রের ভোটার। পরে জায়েদা খাতুন বলেন, নির্বাচন ভালোভাবে চলছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট হয়েছে। আর যদি কোনো অনিয়ম করা হয়, তবে গাজীপুরবাসী মেনে নেবে না। দেশবাসীও মেনে নেবে না। তিনি বলেন, বুধবার রাতে আমাদের এজেন্টদের ভয় দেখিয়েছে। তারপরও সবাই ভোটকেন্দ্রে গিয়েছে। টঙ্গীতে কিছু এজেন্টকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু আমাদের এজেন্ট তারপরও ঢুকেছে। আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন সকাল ৮টা ৫ মিনিটে ভোট দিতে টঙ্গীর আউচপাড়ায় নিউ ব্রোন স্কুল কেন্দ্রে যান। ইভিএম জটিলতায় ২৮ মিনিট পর ভোট দেন তিনি। 
ভোটকেন্দ্রে নৌকা সমর্থকদের প্রভাব : সরেজমিন দুপুর সোয়া ১২টায় নগরীর চৌরাস্তায় পশ্চিম চান্দনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, জানালার বাইরে দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভেতরের গোপন কক্ষে ভোটাররা কোন প্রতীকে ভোট দিচ্ছেন তা নিয়ন্ত্রণ করছেন। কেউ নৌকা ছাড়া অন্য প্রতীকে ভোট দিলে তারা বাইরে থেকে হইচই করছেন এবং দেখে নেওয়ার হুমকিও দিচ্ছেন। সেখানে কেউ কেউ কাউন্সিলর পদে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার নির্দেশনা দেন। এ নিয়ে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছু সময় পরপর উত্তেজনা তৈরি হয়। ওই কেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ২ নম্বর বুথে নৌকার পোলিং এজেন্ট সফিকুল ইসলাম কিছু সময় পরপর গোপন কক্ষে গিয়ে ভোটারদের বদলে নিজেই ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। মো. মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক ভোটার ভোট দিতে গোপন কক্ষে গেলে নৌকার এজেন্ট সেখানে গিয়ে ভোট দিয়ে আসেন। ওই অবস্থায় এ প্রতিবেদক সেখানে হাজির হলে সফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক ভোটার কীভাবে ইভিএমে ভোট দিতে হয় তা জানেন না। তাই সহযোগিতা করতে গোপনকক্ষে গিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানে উপস্থিত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এমএম মঞ্জুরুল আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘গোপন কক্ষে প্রবেশ নিয়ে ইতোমধ্যে কিলাকিলি হয়েছে। আমি কিল খেতে রাজি না। তাই এ বিষয়ে আমার করার কিছুই নাই।’ 
দুপুর ১২টার দিকে ওই কেন্দ্রে আসেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ দেবনাথ। একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়ার অপরাধে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট মো. মোস্তফা ও বহিরাগত এক ব্যক্তিকে আটক করেন। দুটি কক্ষের পোলিং এজেন্টদের মোবাইল জব্দ করেন। 
সালনার পোড়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে আরও ভয়াবহ চিত্র। বেলা ১০টা ২৩ মিনিটে ওই কেন্দ্রে ঢোকার সময়ে দেখা যায়, নৌকার ব্যাজধারী ১০-১৫ জন ব্যক্তি একজনকে মারতে মারতে কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছেন। তিনি হচ্ছেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী খোরশেদ আলম রিপনের এজেন্ট ফরিদুল ইসলাম। তাকে মারধরের কারণ জানতে চাইলে নৌকা ব্যাজধারীরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। আতঙ্কে ওই ব্যক্তি সেখান থেকে সটকে পড়েন। যাওয়ার সময়ে ফরিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, গোপন কক্ষে একজনের ভোট আরেকজন দিতে বাধা দেওয়ায় তাকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। 
এ বিষয়টি জানার চেষ্টা করলে এ প্রতিবেদকে কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেন দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা আলহাজ। প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কেন্দ্রে প্রবেশ করা যাবে না বলেও জানান। একপর্যায়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম মোল্লার কাছে পোলিং এজেন্ট বের করে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। ওই রিটার্নিং কর্মকর্তা দাবি করেন, তার কেন্দ্রের ৯টি বুথের সবকটিতে নৌকা, লাঙ্গল ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের নির্বাচনি এজেন্ট রয়েছেন। 
ওই প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে নিয়ে এ প্রতিবেদক বিভিন্ন ভোটকক্ষে প্রবেশ করে কোনোটিতেই টেবিল ঘড়ি ও লাঙ্গল প্রতীকের নির্বাচনি এজেন্ট দেখতে পাননি। নৌকা প্রতীকের এজেন্টরা জানান, টেবিল ঘড়ি প্রতীকের কোনো এজেন্ট এ কেন্দ্রে সকাল থেকে ছিল না। বিষয়টি জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কিছুটা থতমত খেয়ে বলেন, হয়তো তারা দুপুরের খাবার খেতে গেছেন।
১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম চান্দনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুই নম্বর বুথে নৌকা প্রতীকের এজেন্ট গোপন কক্ষে প্রবেশ করে অন্যের ভোট নিজেই দিয়েছেন এমন দৃশ্যও দেখা গেছে। একজন ভোটার এর প্রতিবাদ করলেও মেয়র পদে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করেন তিনি। একই ধরনের আরও কয়েকটি ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
মাঠে ছিলেন না জায়েদা খাতুনের কর্মীরা : সালনা পোড়াবাড়ী সাবেরিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রের বাইরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নৌকা, লাঙ্গল ও হাতপাখা প্রতীকের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে প্রচার চালাতে দেখা গেছে। নৌকা প্রতীকের ক্যাম্পও ছিল সেখানে। আর ভোটকেন্দ্রের ভেতরেও নৌকার ব্যাজধারী সমর্থকদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে ওই কেন্দ্রের বাইরে কোথাও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের ক্যাম্প ছিল না। এ প্রতীকের ব্যাজধারী কাউকে প্রচার চালাতেও দেখা যায়নি। 
৮ নম্বর ওয়ার্ডের কোনাবাড়ী ডিগ্রি কলেজে স্থাপিত দুটি ভোটকেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নৌকা এবং লাঙ্গল ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট নেই। এ দুটি কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের কোনো লাইন না থাকলেও কলেজ মাঠে বিপুলসংখ্যক মানুষকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। তাদের অনেকেরই বুকে নৌকার ব্যাজ ছিল। তবে সেখানে দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকের ব্যাজ পরা কাউকে দেখা যায়নি। কোনাবাড়ি ডিগ্রি কলেজ এক নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আব্দুল মতিন বলেন, ২৬৫৯ জন ভোটারের এ কেন্দ্রে বিকাল পৌনে ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৯০০ জন ভোট দিয়েছেন। 
এদিকে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু থাকলেও রানী বিলাসমনী বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে শেখ মোহাম্মদ আসাদ নামের এক ভোটার অভিযোগ করেন তার ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছে। দুপুর আড়াইটার দিকে এ প্রতিবেদকের কাছে এমন অভিযোগের কথা জানান তিনি। তার দাবি-তিনি এই কেন্দ্রের ভোটার। তার স্মার্ট ভোটার কার্ড রয়েছে। হাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা। দুপুরে এ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে নিজের ভোট দিতে পারেননি। তিনি বলেন, আমার আঙুলের ছাপ দেওয়ার পরে মনিটরে দেখাচ্ছে ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো ভোট দেইনি। তাহলে আমার ভোট কে দিল?
এ বিষয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, অভিযোগ জানানোর পরে প্রিসাইডিং অফিসার নিজেও বুথে গিয়ে দেখেছেন। কিন্তু কোনো সমাধান দিতে পারেননি। এ বিষয়ে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
এছাড়া সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (কেন্দ্র-২) কেন্দ্র, সালনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজসহ (কেন্দ্র-১) অন্তত ৫০টি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা যুগান্তরের প্রতিবেদকদের জানান, তাদের কেন্দ্রে জায়েদা খাতুনের পোলিং এজেন্ট আসেননি।

LEAVE A REPLY