ফাইল ছবি
কয়লাসংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় (এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট) পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। দুই ইউনিটের কেন্দ্রটির এক ইউনিটের উৎপাদন এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। মজুদ কয়লা দিয়ে দ্বিতীয় ইউনিট চলতে পারে সর্বোচ্চ আগামী ৩ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত। দেশের বড় এই বিদ্যুকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হলে ফের বাড়তে পারে লোডশেডিং।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডলার সংকটে কয়লার বকেয়া বিল বাবদ কেন্দ্রটির গত এপ্রিল পর্যন্ত জমেছে ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার। সময়মতো বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় সম্প্রতি চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিএমসিকে কয়লা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিদ্যুকেন্দ্রটিতে বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ রয়েছে, তা দিয়ে একটি ইউনিট সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত চলতে পারবে।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ এম খোরশেদুল আলম গতকাল রবিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত বকেয়া ছিল প্রায় ৩৩৫ মিলিয়ন ডলার।
চলতি মাসে আমরা ৫৮ মিলিয় ডলার পরিশোধ করেছি। আরো ৪২ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। যারা আমাদের কয়লা সরবরাহ করে, তারা বলেছে এলসি খোলার জন্য। জুনের শুরুতে এলসি খোলা হলে কয়লা আসতে ২৫ দিন লেগে যাবে।
সেই হিসাবে জুন মাসে বিদ্যুকেন্দ্রটি চালু রাখা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, গত ২৫ মে থেকে একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। মজুদ কয়লা দিয়ে সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত আরেকটি ইউনিট চালু রাখা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, এই বিদ্যুেকন্দ্রটির দুটি ইউনিট থেকে দিনে গড়ে প্রায় এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছিল। কয়লাসংকটে একটি ইউনিট বন্ধ থাকায় আরেকটি ইউনিট থেকে এখন দিনে প্রায় ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন আগামী ৫ জুন থেকে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কম্পানি (বিসিপিসিএল), চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কম্পানি লিমিটেড (এনডাব্লিউপিজিসিএল) যৌথ উদ্যোগে।
বিসিপিসিএল সূত্রে জানা গেছে, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাকিতে কয়লা কেনে। ছয় মাস পর পর কয়লার দাম পরিশোধ করতে হয়। কেন্দ্রটিতে যে কয়লার প্রয়োজন হয়, তার জোগান দেয় চীনের সিএমসি। সিএমসির কাছ থেকে বাকিতে কয়লা কেনে পায়রা।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, কয়লার বাকি টাকা দীর্ঘদিন পরিশোধ করতে না পারায় চীনের মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ফলে মে মাসে কয়লা আমদানির কোনো ঋণপত্র খুলতে পারেনি সিএমসি। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুকেন্দ্রটিতে কয়লার সংকট দেখা দিয়েছে।