৬১ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীই ঢাকা দক্ষিণের

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের ৬১.৮ শতাংশ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকার। উত্তর সিটিতে রোগী ১৬.৩ শতাংশ। ২১.৯ শতাংশ ঢাকার বাইরে থেকে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রায় পাঁচ মাসের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

৬১ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী ঢাকা দক্ষিণে

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত চালানো এই জরিপে ঢাকার চারটি সরকারি ও পাঁচটি বেসরকারি এবং একটি স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ভর্তি ৭২২ রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। জরিপে যাত্রাবাড়ী, কেরানীগঞ্জ, কাজলা, উত্তরা, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুগদা ও জুরাইনে সবচেয়ে রোগী পাওয়া গেছে।

এ বছর সবচেয়ে বেশি ৪০৮ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত এক দিনে এই হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ২৮ জন।

বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ৯৪ জন।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নিয়াতুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগ যাত্রাবাড়ী, কাজলা, জুরাইন, মুগদা, খিলগাঁও, মানিকনগর ও আরামবাগ এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, যারা হাসপাতালে আসছে, বেশির ভাগের অবস্থা জটিল। অনেকের একাধিকবার আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস আছে।

ভর্তি রোগীদের বয়স পঁয়ত্রিশের নিচে :

মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পর সবচেয়ে বেশি ১৮৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ উন নবী কালের কণ্ঠকে বলেন, রোগীদের বেশির ভাগ কামরাঙ্গীরচর, কেরানীগঞ্জ ও হাসনাবাদ এলাকার। আজও (গতকাল) ১৩ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে রোগী আছে ২৯ জন। এর মধ্যে পাঁচটি শিশু।

গত মাসে ভর্তি রোগী ছিল ১০৪ জন। এর মধ্যে ৭০ জনের বেশি ভর্তি হয় শেষ ১৫ দিনে। এ বছর ভর্তি রোগীদের গড় বয়স ৩৫ বছরের নিচে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় যেখানে ঘনবসতি বেশি, সেখানে মশার উপদ্রব বেশি। তবে কোন এলাকায় সবচেয়ে বেশি, সেটা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন।

তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো ঢাকা শহরকেই বিবেচনায় নিচ্ছি। আমাদের কাজ রোগী ব্যবস্থাপনা। ডেঙ্গু কোথায় বেশি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারের।

৬০ শতাংশের বয়স ৩০ বছরের নিচে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তথ্য মতে, হাসপাতালে ভর্তি ৭২২ ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ৬১.৫ শতাংশ পুরুষ ও ৩৮.৫ শতাংশ নারী। এর মধ্যে এক থেকে চার বছরের ৭.৬১ শতাংশ, পাঁচ থেকে ৯ বছরের ৭.৭৫ শতাংশ, ১০ থেকে ১৮ বছরের ১৮.৫৫ শতাংশ, ১৯ থেকে ২৯ বছরের ২৬.০৩ শতাংশ, ৩০ থেকে ৩৯ বছরের ১৬.০৬ শতাংশ, ৪০ থেকে ৪৯ বছরের ১০.১১ শতাংশ, ৫০ থেকে ৬০ বছরের ৮.৪৪ শতাংশ ও ষাটোর্ধ্ব রোগী ৪.৫৭ শতাংশ।

এক দিনে নতুন রোগী ভর্তি ১১২ জন :

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে নতুন করে আরো ১১২ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর দুই হাজার ১৩৪ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।

তিন কারণে ডেঙ্গু বাড়ছে :

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে প্রধান কারণ তিনটি। এক. জলাবায়ু পরিবর্তন, দুই. অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও তিন. জনঘনত্ব। তিনি বলেন, জানুয়ারির পর থেকে দেশে অনেক গরম পড়েছে। বিজ্ঞান বলে, কোনো জিওগ্রাফিতে ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে তার দ্বিগুণ পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যায়।

৩১ শতাংশ রোগী ঢাকার বাইরে :

দেশে চলতি বছরের এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ৬৫৭ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে, যা মোট রোগীর ৩১ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, রোগী এখন সারা দেশেই। যেহেতু ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য এলাকার যাতায়াত বেশি, ফলে ঢাকা থেকে মশা বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারে। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাড়ে তিন শতাধিক পৌরসভায় অপরিকল্পিত নগরায়ণ হয়েছে। এতে এডিস মশা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।

LEAVE A REPLY