ডিআইটি প্লট পুকুরে হাইকোর্টের স্থিতাবস্থা

রাজধানীর শ্যামপুর-গেন্ডারিয়া এলাকার শত বছরের পুরোনো ডিআইটি প্লট পুকুর ভরাট-দখল, স্থাপনা অবকাঠামো নির্মাণে স্থিতাবস্থা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে করা এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।

রাজধানীর শ্যামপুর-গেন্ডারিয়া এলাকার শত বছরের পুরোনো ডিআইটি প্লট পুকুর ভরাট, পুকুরের জায়গায় স্থাপনা, অবকাঠামো নির্মাণ ও দখল বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূথ ঘোষণা করা হবে না এবং ভরাট মাটি, নির্মিত স্থাপনা, দখল অপসারণে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। 

পরিবেশ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজদানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ -রাজউকের চেয়ারম্যান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, ঢাকার জেলা প্রশাসক, শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, শ্যামপুরের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহানা আক্তার, সাবেক কাউন্সিলর সাইদুর রহমান শহীদসহ ১১ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে ।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালত রুল জারির পাশাপাশি অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়ে পুকুরটির ভরাট-দখল, স্থাপনা, অবকাঠামো নির্মাণে স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। রাজউক, সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন এটা কার্যকর করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে।

’ 

এ আদেশের ফলে পুকুরটি এখন যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। কেউ কোনো ধরনের স্থাপনা বা অবকাঠামোও নির্মাণ করতে পারবে না, ভরাটও করতে পারবে না। রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় শত বছরের পুরোনো ডিআইটি প্লট পুকুর রক্ষায় রবিবার এ রিট আবেদন করা হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদি সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ -এইচআরপিবি’র পক্ষে সংগঠনটির চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

রিটে বলা হয়, বিবাদীরা বিদ্যমান আইন অনুসারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিলে রাজধানীর শ্যামপুর-গেন্ডারিয়া এলাকার পুকুর দখল, ভরাটের মত ঘটনা ঘটতো না। যদিও নদী, জলাধার, পুকুর ভরাট-দখল বন্ধ করতে বিবাদীরা আইনত বাধ্য। শ্যামপুর-গেন্ডারিয়া এলাকার পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেরা পৌর এলাকাসহ দেশের সকল পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মৃক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ এর ২(চ) অনুসারে প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত। বিদ্যমান এ আইনের ৮ ধারা অনুসারে প্রাকৃতিক জলাধার, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। কেউ তা করলে ন্যূনতম পাঁচ বছরের কারাদন্ডের বিধান রয়েছে।

ফলে ডিআইটি পুকুরের জায়গায় মাটি ভরাট, দখল, স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য। তারপরও পুকুরটি ভরাট-দখল ঠেকাতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনবে। তাছাড়া আইনের প্রয়োগ না হলে আইনের অপব্যবহার ঘটে। আর এতে নাগরিককে তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।

 রাজধানীর শ্যামপুর-গেন্ডারিয়া এলাকার শত বছরের পুরোনো ডিআইটি প্লট পুকুর রক্ষার দাবিতে গত ২ জুন মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েও পরে স্থগিত করে পরিবেশবাদি কয়েকটি সংগঠন। পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করা হয় বলে সেদিন আয়োজকেরা সাংবাদিকদের জানান।

 বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবরে বলা হয়েছে, গত ২ জুন যেখানে মানববন্ধন হওয়ার কথা ছিল, তার কিছুটা দূরে বেশ কিছু বস্তিবাসী জড়ো হয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করে। তারা মানববন্ধন কর্মসূচির আহ্বায়ক ইব্রাহীম আহম্মেদ বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন। জড়ো হওয়া এসব মানুষ সাবেক কাউন্সিলর সাইদুর রহমান ও তার মেয়ে বর্তমান কাউন্সিলর সাহানা আক্তারের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
 

LEAVE A REPLY