২৬ হাজার হজযাত্রীর ভিসা ইস্যুর শেষ সময় আজ

ফাইল ছবি

চলতি বছর এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাবেন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ হজযাত্রীর ভিসা ইস্যুর কাজ আজ বুধবারের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলেছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৭২ হাজার বা ৫৮.৯ শতাংশ হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ফলে বাকি ২১.১ শতাংশ বা ২৬ হাজার হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু করতে আজকের দিনটিই পাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, এক দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় হাজার হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু করা সম্ভব। ফলে অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে যাচ্ছে প্রায় ২০ হাজার মানুষের হজযাত্রা। এদিকে এ পর্যন্ত কয়জন হজযাত্রীর বিমান টিকিট করা হয়েছে, এর তথ্য মিলছে না হজসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে। হজ এজেন্সিগুলো পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ না করায় এমন জটিলতা দেখা দিয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।

তবে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহদাত হোসাইন তসলিম বলছেন, ওয়েবসাইট হালনাগাদের দায়িত্ব ধর্ম মন্ত্রণালয়ের।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, হজযাত্রীর বাড়ি ভাড়া না হওয়া পর্যন্ত সৌদি ভিসার জন্য আবেদন করা যায় না। কিন্তু প্রায় ১০০ হজ এজেন্সি কম টাকায় বাড়ি ভাড়া খুঁজতে গিয়ে এখনো বাড়ি ভাড়া করতে পারেনি। ফলে এসব এজেন্সির প্রায় ৫০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা এখনো হয়নি।

দ্রুত বাড়ি ভাড়া শেষে হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন না হলে তাঁদের হজযাত্রা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। সম্প্রতি বাড়ি ভাড়ার অনিয়মের কারণে ইউরো ও কোবা এয়ার ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও ছেলে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এই মালিকের অধীন ৮২৩ হজযাত্রীর হজযাত্রাও ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

বিমানের টিকিটের তথ্য নেই ওয়েবসাইটে

এদিকে ২০২৩ সালের হজ ফ্লাইটের তথ্য পোর্টালে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও ওয়েবসাইটে মিলছে না তথ্য। এখন পর্যন্ত কয়জন হজযাত্রীর বিমান টিকিটের জন্য ব্যাংকে পে অর্ডার করা হয়েছে, এসংক্রান্ত কোনো তথ্য ওয়েবসাইটে নেই।

এ জন্য সম্প্রতি ৯০টি হজ এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো ১৬টি হজ এজেন্সি ব্যাংকে কোনো পে অর্ডার করেনি। ৫৩টি হজ এজেন্সি ব্যাংকে পে অর্ডারের কথা বলে কোনো যোগাযোগ করেনি। অথচ আগামী ২২ জুন থেকে সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম শাহদাত হোসাইন তসলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত কয়জন হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু হয়েছে, সে তথ্য আমার কাছে নেই। তবে দ্রুত সব হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি।’

বিমান টিকিটের হালনাগাদ তথ্য ওয়েবসাইটে না থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনের তথ্য ওয়েবসাইটে দিতে হবে। এ কাজটি ধর্ম মন্ত্রণালয় বিজনেস অটোমেশনের মাধ্যমে করছে।’

বিজনেস অটোমেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হজযাত্রীদের বিমান টিকিটের জন্য ব্যাংকে পে অর্ডারের তথ্য আমাদের দেওয়া হয় না। সংশ্লিষ্ট এজেন্সি ও ব্যাংক থেকে তথ্য না পাওয়ায় হজের পোর্টালে এ তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন বাংলাদেশি পবিত্র হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে যাবেন। তাঁদের মধ্যে এখনো ৫০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা ইস্যু করা হয়নি। অথচ চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আর ২০ দিন পরেই আগামী ২৭ জুন এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে।

ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ অনুবিভাগ) মতিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হজযাত্রীদের ভিসা ও বিমান টিকিট দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য হজ এজেন্সিগুলোকে কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব হজ এজেন্সি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের বার্তার উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল কাউন্সিলর (হজ) মো. জহিরুল ইসলামের সই করা চিঠিতে বলা হয়, সৌদি সরকারের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৭ জুনের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। কয়েকটি দেশের ভিসাপ্রাপ্তির সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম বিধায় ৭ জুনের মধ্যে ভিসা ৮০ শতাংশ সম্পন্ন না হলে সংশ্লিষ্ট হজ অফিসকে লাল তালিকাভুক্ত করা হবে এবং এর সব দায়ভার সংশ্লিষ্ট হজ অফিসকে নিতে হবে। এমতাবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৮০ শতাংশ ভিসাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হজ কার্যক্রম পরিচালনাকারী হজ এজেন্সিগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে সব কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানান হজ কাউন্সিলর।

একই সঙ্গে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক কো-অপারেশন বিভাগের প্রতিনিধি আল-হাসান আল-মানাখেরাহর সই করা নির্দেশনাটিও দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, আগামী ৭ জুনের মধ্যে ভিসা ইস্যুর শতকরা ৮০ ভাগ কাজ সম্পাদন করা চাই। এর ব্যত্যয় ঘটলে সৌদি হজ মন্ত্রণালয় যেকোনো ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য থাকবে।

LEAVE A REPLY