ভারত থেকে পেঁয়াজ আসছে ১৪-১৭ টাকা কেজি দরে

ভারত থেকে আমদানি শুরুর পর পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কমে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় এখনো ৮৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ খুচরা বাজারে এলে দাম কমতে শুরু করবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। 

গত সোমবার থেকে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এক হাজার ২৮৮ টন আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে এসেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা) মো. কামরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, গত দুই দিনে চার লাখ ৩৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

দেশের তিন স্থলবন্দরের কাস্টমস স্টেশনের তথ্যে দেখা যায়, প্রতি চালানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ১৩ থেকে ১৬ সেন্টে। ডলারের বিনিময়মূল্য ১০৮ টাকা ১৭ পয়সা ধরে মানভেদে আমদানিমূল্য দাঁড়ায় ১৪ থেকে ১৭ টাকা ৩০ পয়সা। গড়ে দাম পড়ে কেজিপ্রতি প্রায় সাড়ে ১৫ টাকা।

প্রতি কেজিতে কর গড়ে সাড়ে তিন টাকা। এ হিসাবে শুল্ক-করসহ পেঁয়াজ আমদানিতে খরচ পড়ে প্রায় ১৯ টাকা।

এদিকে আদার ঝাঁজ কমছেই না। দেড় মাস আগেও ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে যে চীনা আদা বিক্রি হতো, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়।

দেশি ও আমদানি করা কেরালা জাতের আদাও দাম বেড়ে ৩২০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেহেতু পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে, দ্রুতই খুচরা পর্যায়েও চলে আসবে। তখন দামও কমে আসবে। আদার দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি, গত দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে চীন থেকে আদা আমদানি বন্ধ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকেও আমদানি কম হচ্ছে।

এ কারণে আদার দাম বাড়তি।

গতকাল রাজধানীর শ্যামবাজার, রামপুরা ও বাড্ডার বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় রাজধানীর পাইকারি বাজারে স্বস্তি ফিরে আসে। দাম নেমে আসে কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারের দোকানগুলোতে ভারতীয় পেঁয়াজ এখনো পৌঁছেনি। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ দোকানে না এলেও আমদানির খবরে আগের চেয়ে কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে, যা তিন দিন আগেও খুচরায় ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজার পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক মো. মাজেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই-তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কমেছে। দুই দিন আগে আমরা পাইকারিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি ৯০ টাকা দরে। ভারতীয় পেঁয়াজ চলে আসায় আজ (গতকাল) পাইকারিতে বিক্রি করেছি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে। দাম সামনে আরো কমবে।’

রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারের হালিম এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আসার খবর পেয়েছি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে পৌঁছেনি। তাই বাজারে আগের কেনা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজি ৯০ টাকায় বিক্রি করছি।’

আদার দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাজারে এখন কেরালা জাতের আদা বিক্রি হচ্ছে কেজি ৩২০ টাকা। চীনের আদা দীর্ঘদিন ধরেই বাজারে নেই।’

রাজধানী বাড্ডার ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বলেন, ‘মাত্র কয়েক দিন আগেই পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকায় উঠেছিল, পরে পেঁয়াজ আমদানির খবরে পাইকারিতে কিছুটা দাম কমলে আমরাও দাম কমিয়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে আমদানির করা পেঁয়াজ এখনো খুচরা পর্যায়ে আসেনি।’ তিনি বলেন, আদার দাম এখনো কমেনি। চীনের আদার সংকটের কারণে বাজারে দাম অনেক বাড়তি। চীনের আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় এবং কেরালা জাতের আদা ৩০০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, পেঁয়াজের দাম রোজার ঈদের পর থেকে বাড়তে শুরু করে। দেড় মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজি ৩০ থেকে ৮০ টাকায় ওঠে। কয়েক দিন ধরে ১০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছিল। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলে এত দিন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি কৃষি মন্ত্রণালয় না দিলেও পরিস্থিতি দেখে রবিবার সায় দেয়।

হিলিতে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ। এতে দুই দিনের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ১৫ টাকা। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসায় দেশি পেঁয়াজের দাম আরো কমবে। এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ হিলি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে।

গত সোম ও মঙ্গলবার ভারতীয় ৪৫টি ট্রাকে ৯৫২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বন্দরে প্রবেশ করে। হিলি আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ হারুন জানান, গত ১৬ মার্চ থেকে এই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়। প্রথম দিন সোমবার তিন ট্রাক এবং দ্বিতীয় দিন গতকাল ৪২ ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরে এলো ১৩২ ট্রাক :  চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল ১৩২টি ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। এর আগে সোমবার ৫৬টি ট্রাক পেঁয়াজ বন্দরে প্রবেশ করে।

এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির পর স্থানীয় বাজারে এক দিনেই দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কমেছে। গত রবিবার বাজারে এই পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছিল। এখন ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।

সাতক্ষীরায় দাম কমল পেঁয়াজের

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে সোমবার সন্ধ্যায় ১৯ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ ঢোকে। এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজ ঢোকার আগেই স্থানীয় সুলতানপুর বড়বাজারে দাম কমেছে। ভোমরা স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পেঁয়াজ ঢুকেছে ৫৯ ট্রাক।

এদিকে ১০ থেকে ২০ টাকা কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে সাতক্ষীরার বাজারে। মিলবাজারের ব্যবসায়ী আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা যে দামে পেঁয়াজ কিনি, কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা লাভে তা বেচি। কয়েক দিন আগেও পেঁয়াজ কিনতাম ৮০ টাকার ওপরে। আজকে (গতকাল) কিনেছি ৭০ টাকা দরে। বিক্রি করছি ৭৫ টাকা।’

সপ্তাহখানেকের মধ্যে পেঁয়াজের দাম ৫০ টাকার নিচে চলে আসবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ী নেতারা।

LEAVE A REPLY