সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌবন্দর এলাকায় বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে রোববার দিনভর দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত আহত হয়েছেন। আহতদের শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে যাদের নাম জানা গেছে, তারা হলেন- শফিকুল ইসলাম (৪৫), মজনু মিয়া (৩৫), তুষার (৩০), আয়নাল হক (৬৫), আব্দুল আলীম (৪০), স্বপন (৪৫), সবুজ (৩০), আমিরুল (২২), জলিল খা (৬০), আইয়ুব আলী (৬৫), ইমরান (২০), রাকিব (২৫), মজনু (২৪), মিলন (২৫), হাফেজ (৫০), সনেট (৩৫) ও জুঁই (২৬)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, চাকরির জন্য শাকতোলা গ্রামের আলমগীর হোসেন আলোকদিয়ার গ্রামের নজরুল ইসলামকে ৭ লাখ টাকা দেন। ২ বছর আগে আকস্মিকভাবে নজরুলের মৃত্যুর কারণে তার ভাতিজা নয়ন হোসেন জিম্মাদার হয়ে এ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। দীর্ঘ দুই বছরেও এ টাকা আর তিনি ফেরত দেননি। ফলে পাওনা টাকা ফেরত না পেয়ে রোববার বেলা ১১টার দিকে ক্ষুব্ধ হয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর এলাকার নয়নের কম্পিউটারের দোকানে আলমগীর ও তার লোকজন তালা ঝুলিয়ে দেন। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এরপর দুপুরে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে উভয়পক্ষই রামদা, লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। একপর্যায়ে শাকতোলা গ্রামের লোকজন ভবনের ছাদে উঠে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। তাদের লক্ষ্য করে আলোকদিয়ার গ্রামের লোকজন মহাসড়কে দাঁড়িয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এ সময় ইটের আঘাতে ওই ভবনের দুটি বেসরকারি ব্যাংকের সাইনবোর্ড ও গ্লাস ভেঙে যায়। এ ছাড়া বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়কে সব প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সংঘর্ষ চলাকালে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পুরো এলাকার সব দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বগুড়া-নগরবাড়ি মহাসড়ক অবরোধ করে আবারো উভয়পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলে।দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উভয়পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে এ সংঘর্ষ চলাকালে মহাসড়কের দুপাশে শত শত যানবাহন আটকাপড়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন যাত্রীরা। এ ঘটনার পর থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
শাহজাদপুর থানার ডিউটি অফিসার এসআই আসাদ বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত আছে। এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে আলোকদিয়ার গ্রামের আহত তুষার বলেন, রোববার সকালের দিকে হঠাৎ করে আলমগীর নয়নকে দোকান থেকে রেব করে দিয়ে তার দোকানে তালা লাগিয়ে দেয়। এ খবর গ্রামে পৌঁছালে গ্রামবাসী সেখানে এগিয়ে গেলে তারা হামলা চালায়। ফলে উভয়পক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে জানতে আলমগীর হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।