কোরবানির পশুর বর্জ্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ লক্ষ্যে প্রায় ১৯ হাজার ২৪৪ পরিচ্ছন্নতাকর্মী বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু করেছে। যদিও থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ায় অপসারণকাজে বিঘ্ন ঘটছে, তবুও রাজধানীতে কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থানের পাশাপাশি রাস্তা-ঘাট ও অলিগলিতে জবাইকৃত পশুর বর্জ্য অপসারণ শুরু করেছে দুই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
দ্রুত ও নির্ধারিত সময়েই বর্জ্য অপসারণে হটলাইন খোলা থাকবে এবং বর্জ্য অপসারণের প্রায় ১১ লাখ প্লাস্টিক ও পলিব্যাগ সরবরাহ করেছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।
সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন দুই মেয়র।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অধিক্ষেত্রভুক্ত এলাকায় কোরবানির পশুর হাটগুলো এবং কোরবানীকৃত পশুর সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সরেজমিনে তদারকির লক্ষ্যে ডিএসসিসির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদারকি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিবহন বিভাগ ও যান্ত্রিক বিভাগের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে কোরবানিদাতাদের মধ্যে বিনা মূল্যে সরবরাহের লক্ষ্যে এক লাখ ৩০ হাজার চটের ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। পশুর হাটে পশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে অসুস্থ পশু নির্বাচন এবং চিকিৎসা প্রদানে প্রতিটি পশুর হাটের জন্য একটি করে মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে এবং ২৬ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম শুরু হয়। ইতোমধ্যে ১১০ গ্যালন (৫ লিটার) স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরো ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের তথ্য জানতে ও জানাতে হটলাইন নম্বর চালু করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নম্বরগুলো হলো- ০১৭০ ৯৯০০ ৮৮৮, ০২২২ ৩৩৮ ৬০১৪।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন শিমুল জানান, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য দুই লক্ষাধিক লিফলেট বিতরণ, প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে নামাজের পর ও জুমার খুতবার সময় কোরবানির পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসল্লিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের আওতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব দুই লাখ ১১৭ জন এবং অন্যান্য বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়সহ সর্বমোট ১০ হাজার ৩১৪ জন কর্মী কোরবানির বর্জ্য অপসারণে নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অঞ্চলভিত্তিক বর্তমান জনবলের সংখ্যা দুই হাজার ১১৭, ৩৬টি ওয়ার্ডে পিডাব্লিউসিএসপির কর্মী চার হাজার ৫০০ জন, ২৬টি ওয়ার্ডে বেসরকারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুই হাজার ৬৬৩ জন, স্পেশাল ক্লিনার ৪২২ জন এবং ওয়ার্ডভিত্তিক বর্জ্য সংগ্রহকাজে ভাড়ায় নিয়োজিত পিকআপের কর্মী ৬১২ জন।
তিনি জানান, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবনের নিচতলায় অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোলরুমের নম্বর : +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪, ১৬১০৬।
কন্ট্রোলরুমের পাশাপাশি বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ২৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তাদের তদারকি করার জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হবে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের ছুটিকালীন কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।