কাঁচা মরিচের ঝালে বাজার অস্থির, হাজারের ঘরে জিরা

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীর বাজারে হু হু করে বাড়ছে কাঁচা মরিচের দাম। আমদানির অনুমতি দিয়েও দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। আমদানি অনুমতির একদিন পরেই এর দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে ৪০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। এদিকে, রান্নার অন্যতম মসলা জিরা গত বছরে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে প্রতি কেজি সাড়ে ৯শ থেকে এক হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে।

কোরবানির ঈদের আগে পশুসহ ঈদকেন্দ্রিক প্রায় সব পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামের মধ্যে বাজারের এমন অস্থির অবস্থা বেশি ভোগাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষদের। কাঁচা মরিচের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ বলতে পারছেন না অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ী। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য বাজারে সরবরাহ কম। ঘাটতি আছে বলেই সরকার আমদানির অনুমতি দিয়েছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আড়াইশ গ্রাম কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে এক কেজি ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা। হঠাৎ কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় গত রবিবার আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, রবিবার সারাদিনে কাঁচা মরিচের ৩০টি আইপিতে ১১ হাজার ৬০০ টন কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

সরকার আমদানি অনুমতি দেয়ার পরও একদিনের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারগুলোয় কেজিতে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ১০০ টাকা। ঢাকার মালিবাগ বাজারে আসা আয়শা সিদ্দিকা বলেন, কাঁচা মরিচ পচনশীল, তাই অল্প অল্প কেনাকাটা করি। একদিন আগে কিনে নেয়া কাঁচা মরিচের দাম আজ অনেক বেশি। এত অল্প সময়ের ব্যবধানে কীভাবে এত দাম বাড়ে- এমন প্রশ্ন তার।

খিলগাঁও বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। সেখানকার ব্যবসায়ী করিম বলেন, আড়াইশ গ্রাম কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা। এক কেজি নিলে ৪০০ টাকা। ৪০০ টাকার নিচে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, কাঁচা মরিচের দাম বাড়ানোর জন্য আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা দায়ী নয়, বাজারে কাঁচা মরিচ নেই- এমন খবর ছড়িয়ে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ভালোভাবে বাজার মনিটরিং করলে দাম কমে আসতে পারে।

জিরার বাজার অস্থির : কয়েক সপ্তাহ আগে জিরা ৪৫০ টাকা দামে পাওয়া গেলেও এখন এর দাম হাজার টাকা। কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে অস্থির মসলার বাজার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে জিরা আর আদা। বর্তমানে খুচরা বাজারে জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৯শ থেকে এক হাজার টাকা। অথচ গত ঈদে দাম ছিল ৪৫০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদুল ফিতরের পর থেকে মসলার বাজারে ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে পাইকারি বাজারে জিরা বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়, যা ওই সময় ৪৫০ টাকা ছিল। আর আদার দাম এ সময়ের ব্যবধানে ১২০ থেকে বেড়ে ৩৬০ টাকা হয়েছে।

বাজারের মতো একই তথ্য দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির তথ্যমতে, ২০২২ সালের জুনে প্রতি কেজি জিরা সর্বনি¤œ ৩৮০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ওই সময়ে আমদানি করা আদা মানভেদে কেজিপ্রতি ৬০-১০০ টাকায় এবং দেশি আদা ১২০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে আদার দাম ৩ থেকে ৫ গুণ বেড়েছে।

কুরবানি মাংসের আরেক অনুষঙ্গ রসুনের দামও বাড়তি। আমদানি করা রসুন পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে, আর খুচরা বাজারে এর দাম ধরা হয়েছে ১৬০-১৮০ টাকা। দেশি রসুনের পাইকারি দর কেজিপ্রতি ১২০ টাকা, খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। মানভেদে কোনো কোনো রসুনের কেজি ১৮০ টাকাও চাওয়া হচ্ছে। প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। গত মাসে লবঙ্গের প্রতি কেজি ছিল দেড় হাজার টাকা। এদিকে এক মাসের ব্যবধানে এলাচের প্রায় ১০০ টাকা

বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা। এছাড়া গোলমরিচ ৭০০-৭৫০ টাকায়, দারুচিনি ৪৫০ টাকা এবং ধনিয়া ২৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা। গত ৩ মার্চে তা ছিল ৩০ টাকা। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। শেষ ৮১ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৫ জুন থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার। সরকারের এই ঘোষণার পর পরই পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা কমে ৮০ টাকায় নেমে আসে। এরপর আর পেঁয়াজের দাম কমেনি।এমকে

LEAVE A REPLY