পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি খুশি নন কর্মচারীরা

পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন কর্মচারীরা। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের মূল বেতন ৮ হাজার ২০০ টাকা। এই বেতন ২০১৫ সালে দেওয়া পে-স্কেলে নির্ধারণ করা হয়। ৮ বছর পর পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির ফলে তাদের বেতন বেড়েছে মাত্র ৪০০ টাকা। কর্মচারী সংগঠনের নেতারা বলছেন, এই সামান্য বেতন বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্তে তারা হতাশ। তারা ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের দাবি, এটা সরকারের নির্বাচনি কৌশল। তারা আরও জানান, অফিস পুরোদমে চালু হলে সভা করে সিদ্ধান্ত নেবেন কী করা যায়। প্রয়োজন হলে তারা আন্দোলনে যাবেন। কারণ, বিদ্যমান বেতনে তাদের সংসার চলে না।

তারা জানান, অধিকাংশ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্ধিত বাড়ি ভাড়া, জ্বালানি গ্যাস বিল, বিদ্যুৎ বিল, যাতায়াতে পরিবহণ ভাড়া, চিকিৎসা ব্যয় এবং সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে গিয়ে তারা সংসার চালাতে পারছেন না। কারণ, এখন সবকিছুর মূল্য প্রায় দ্বিগুণ। সরকার পাঁচ শতাংশ বেতন বাড়ালে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বেতন বাড়বে ৪০০ টাকা। যদিও একজন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার বেতন বাড়বে প্রায় ৪ হাজার টাকা। সরকার যদি সবার জন্য গড়ে ৪ হাজার টাকা বৃদ্ধি করে, তাহলে তা কিছুটা হলেও যৌক্তিক হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের মহাসচিব মো. তোয়াহা যুগান্তরকে বলেন, আমরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গণমাধ্যমকে অবহিত করব। বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান বলেন, পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির ঘোষণায় আমরা ক্ষুব্ধ। ইতোমধ্যে সরকারের একজন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কর্মচারীদের অসন্তুষ্টির বিষয়টি জানিয়েছি। সরকার ৮ বছর পর আমাদের পাঁচ শতাংশ বেতন বাড়িয়েছে। কিন্তু বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে অনেক বেশি।

তিনি আরও বলেন, ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতনে যে কর্মচারী চাকরি করেন, তার বেতন বেড়েছে ৪০০ টাকা। অথচ গ্যাস ও ঘর ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। ৮ বছরে এক শতাংশ করে হলেও কম করে ৮ শতাংশ বাড়ার কথা। তা হয়নি। এটা একধরনের তামাশা।

অপর এক নেতা বলেন, যাদের মূল বেতন বেশি, তাদের বেতন আরও বেড়েছে। কিন্তু যাদের মূল বেতন কম, তাদের বেতন সেই হারে বাড়েনি। সরকারি হিসাবেই যেখানে মূল্যম্ফীতি ১০ শতাংশ, সেখানে পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কোনো মানে হয় না। আমরা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বক্তব্য সরকারের কাছে তুলে ধরব।

সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি এক ধরনের তামাশা। আমরা হতাশ, ক্ষুব্ধ ও বিক্ষব্ধু। এটা কোনো অবস্থায়ই মেনে নেওয়া যায় না। সরকার যদি মুজিববর্ষে কিংবা স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে কোনো আর্থিক সুবিধা ঘোষণা করত, সেটি হতো প্রণোদনা। কিন্তু পাঁচ শতাংশ বেতন বাড়িয়ে সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। নির্বাচনি প্রচারের জন্য এটা একটা কৌশলমাত্র। এখন সরকার বলবে, আমরা কর্মচারীর বেতন পাঁচ শতাংশ বাড়িয়েছি। আমরা প্রণোদনা চাই না। আমরা বাঁচতে চাই। বাজার দরের সঙ্গে সমন্বয় করে বেতন বাড়াতে হবে।

বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে পাঁচ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা জুন ক্লোজিং এবং ঈদুল আজহার ছুটির কারণে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারিনি। বাংলাদেশ কালেক্টরিয়েট কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি এবং বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতি পৃথক মিটিং করে সরকারের কাছে যৌথভাবে দাবিগুলো পেশ করব।

LEAVE A REPLY