অটোরিকশা ছিনতাই, ১০ দিন ধরে নিখোঁজ চালক

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে চালককে অজ্ঞান করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। বুধবার বিকালে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত র‌্যাব-১০ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন।

গত ২৭ জুনের ঘটনায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অটোরিকশার চালক ফিরোজ (২২)। উদ্ধার করা যায়নি ছিনতাই হওয়া রিকশাটি।

অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন জানান, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা সবাই মিলে পরিকল্পনা করত এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী অটোরিকশা ছিনতাই করত। নানা ছলাকলার পর শেষে চালকে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট খাইয়ে অজ্ঞান করে রাস্তার পাশে বা নির্জন কোনো জায়গায় ফেলে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যেত।
তিনি আরও জানান, গত ২৭ জুন হাসনাবাদের বাসিন্দা ফিরোজ আলম নামে (২২) এক অটোরিকশা চালক চক্রটির খপ্পরে পড়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় ফিরোজর বাবা কিবরিয়া গাজী পরদিন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করেন। ঘটনাটি জানতে পেরে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল নিখোঁজ ইজিবাইজ চালক ফিরোজকে উদ্ধার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। র‌্যাব-১০ এর দলটি তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শফিকুল ইসলাম (৪৫), নুর ইসলাম (৩২), আব্দুর রহমান (২৭), গোলাম রাব্বিকে (২৫) গ্রেফতার করে।

এই ৪ জনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই দিনই গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি হতে শীমা আক্তারকে (২৮) এবং বুধবার সকালে মাদারীপুরের শিবচর এলাকা থেকে শাহনাজকে (৩৭) গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট, চেতনানাশক ওষুধ, ভিকটিম ফিরোজের মোবাইল ফোন ও একটি চোরাইকৃত সিএনজি উদ্ধার করা হয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, ২৭ জুন শফিকুল, নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, আব্দুর রহমান, শীমা আক্তার ও শাহনাজ ইজিবাইক ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন হাসনাবাদ এলাকায় অবস্থান করে। নুর ইসলাম, গোলাম রাব্বি, শীমা ও শাহনাজ হাসনাবাদ গরুর হাটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভিকটিম ফিরোজ এর ইজিবাইক ভাড়া করে।

গরুর হাটে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বিকে ইজিবাইক চালক ভিকটিম ফিরোজের সঙ্গে চা বিস্কুট খাওয়ার কথা বলে শীমা ও শাহনাজ গরু হাটে চলে যায়। অতঃপর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি তাদের কাছে থাকা চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুটের অনুরূপ এক প্যাকেট বিস্কুট চায়ের দোকান থেকে ক্রয় করে। পরবর্তীতে তারা কৌশলে উক্ত বিস্কুটের প্যাকেটটি পরিবর্তন করে চেতনানাশক ওষুধ মেশানো বিস্কুট ইজিবাইক চালক ফিরোজকে খাওয়ায়।

কিছুক্ষণ পর ফিরোজের শরীরে চেতনানশক প্রতিক্রিয়া শুরু হলে তারা ইজিবাইকসহ ফিরোজকে উক্ত এলাকা হতে অন্যত্র সরিয়ে কাউটাইল এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর নুর ইসলাম ও গোলাম রাব্বি ভিকটিম ফিরোজকে বেসামাল অবস্থায় গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে ইজিবাইক নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার পাগলা এলাকায় নিয়ে গিয়ে তাদের দলনেতা শফিকুল ইসলামের কাছে অটোরিকশাটি হস্তান্তর করে। শফিকুল ইসলাম সেটি শহিদ নামক একজন ব্যক্তির কাছে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার শফিকুল ইসলাম অজ্ঞান পার্টি চক্রটির দলনেতা। সে পেশায় একজন সিএনজিচালক। পেশার আড়ালে তিনি চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে সিএনজি-ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ও নেতৃত্ব প্রদান করে থাকে। তার কাছ থেকে চোরাইকৃত একটি সিএনজি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক, চুরি, অসাধুভাবে চোরাই মালামাল বেচাকেনাসহ চারটি মামলা রয়েছে। আসামি নুর ইসলাম পেশায় ট্রাকের হেলপার। সে শফিকুলের নেতৃত্বে সিএনজি-ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চালকদের চেতনানাশক মেশানো বিস্কুট খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করত।

আসামি গোলাম রাব্বি পেশায় ইজিবাইক চালক। তিনি রেকি করে অটোরিকশাচালক টার্গেট করতেন। আসামি আব্দুর রহমান পেশায় সিএনজি চালক। তিনি শফিকুলের নেতৃত্বে ছিনতাইকৃত সিএনজি চালানোর দায়িত্ব পালন করেন। তার নিকট থেকে ভিকটিম ফিরোজের মোবাইলটি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার শাহনাজ বিস্কুটের ক্রিমের সঙ্গে মিশ্রণ করার জন্য বিক্রয় নিষিদ্ধ চেতনানাশক ওষুধ অবৈধভাবে দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা হতে সংগ্রহ করত। তিনি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন এবং সেখানে বসে তারা ইজিবাইক/সিএনজি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করতেন।

শীমা আক্তার সিএনজি/ইজিবাইক ভাড়া করে তাদের পূর্ব-পরিকল্পিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতেন। শীমার কাছ থেকে ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত চেতনানাশক মিশ্রিত বিস্কুট ও চেতনানাশক ওষুধ উদ্ধার করা হয়েছে।

এদিকে ৬ আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও ভিকটিম ফিরোজ আলমকে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা যে স্থানে ভিকটিমকে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলেছিল, সেই স্থানে আমরা তল্লাশি করেছি, কিন্তু ভিকটিমকে পাওয়া যায়নি। তাকে সন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহজামান বলেন, ঘটনাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। ভিকটিমকে খোঁজা হচ্ছে। র‌্যাব থেকে আসামিদের হস্তান্তর করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY