কারাগারে হাজতি নির্যাতন: কারারক্ষী ফাতেমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ

গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বন্দীকে নির্যাতনের ঘটনার তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় কারাগারের মেট্রন (মহিলা কারারক্ষীদের প্রধান) ফাতেমা আক্তারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করার সুপারিশ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেষ্ঠ্য জেল সুপার ওবায়দুর রহমান।  

গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে রুনা লায়লা নামের এক হাজতিকে গত ১৯ জুন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াসহ তার সহযোগীরা অমানবিকভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতনে পাপিয়ার সঙ্গে মহিলা কারাগারের মেট্রন (মহিলা কারারক্ষীদের প্রধান) ফাতেমা আক্তারও অংশ নেয়।  

এ ঘটনায় কারাগারের সুপার ওবায়দুর রহমান কারাগারের জেলার ফারহানা আক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য দুই সদস্যরা ছিলেন সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর শাহানুর এবং মহিলা কারারক্ষী ফারজানা আক্তার। ওই কমিটি যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া ও মেট্রন ফাতেমা আক্তারকে দায়ী করেন। 

এ ঘটনার পর মেট্রন ফাতেমা আক্তারকে প্রাথমিকভাবে ২০ জুন শোকজ করা হয়। ২৮ জুন শোকজের জবাব দেন তিনি। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ১ জুলাই তাকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়। ৩ জুলাই কারা অধিদপ্তর বরাবর মেট্রন ফাতেমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। 

এছাড়া জেলা প্রশাসক কর্তৃক তিন সদস্যের যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল তার প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কারাগারের নির্যাতনের ঘটনায় গত ৩ জুলাই গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি কারা কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরদারিতে রয়েছেন। 

গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. হুমায়ুন কবির জানান, আমরা তদন্তের কাজ শুরু করেছি। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।

গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে ৪০ মাস ধরে বন্দী থাকায় এবং ২৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে জেলবিধি অনুযায়ী পাপিয়াকে ‘রাইটার’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। 

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, নথি চুরির একটি মামলায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আনা হয়। কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়ার পর রুনা লায়লার দেহ তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা পান। 

ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পাপিয়া ও তার সহযোগীরা ১৯ জুন রুনাকে নির্যাতন শুরু করেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের। একপর্যায়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রুনাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এ নিয়ে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিল বা সালিস বসে। সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বন্দীরা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। তবে পাপিয়ার ভয়ে সাধারণ কয়েদিরা রুনা লায়লার ওপর অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদও করতে পারেননি।

কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেষ্ঠ্য জেল সুপার ওবায়দুর রহমান বলেন, গঠিত তদন্ত কমিটি বন্দী নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে মেট্রন ফাতিমা আক্তারের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন। এ কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করে উর্ধ্বতন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

LEAVE A REPLY