সংঘাতে না জড়িয়ে প্রত্যাবাসনের জন্য ধৈর্য ধরুন

নিজেদের মধ্যে সংঘাত-বিভেদে না জড়িয়ে প্রত্যাবাসনের জন্য ধৈর্য ধরতে রোহিঙ্গাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল। বুধবার কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় এই আহ্বান জানানো হয়। সকালে ৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছে প্রতিনিধিদলের গাড়িবহর। দলের নেতৃত্ব দেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া।

ক্যাম্পে পৌঁছেই জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর)  রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সেখানে তারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চলমান কার্যক্রম দেখেন। এরপর তারা ক্যাম্প-১১-তে অ্যাকশন এইড অফিসে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা, মসজিদের ইমাম এবং যুবকদের সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, প্রত্যাবাসনসহ নানা বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এ সময় রোহিঙ্গারা তাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন ও মৌলিক অধিকারপরিপন্থি বিভিন্ন বিধিনিষেধের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া তারা রাখাইন রাজ্যে তাদের ওপর চালানো গণহত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের বর্ণনা দেন। পাশাপাশি নিরাপদ, টেকসই ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ সময় অন্তত ২৫ জন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তাদের বক্তব্য শোনার পর প্রত্যাবাসন ও মিয়ানমারের নির্যাতনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিচারের জন্য ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান তিনি।

পরে রোহিঙ্গাদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদলের হাতে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যবাসনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ করে দ্রুত প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা ক্যাম্প-১৮-তে অবস্থিত রোহিঙ্গা কালচারাল সেন্টারও পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শনকালে উজরা জেয়ার সঙ্গে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি’র এশিয়া দপ্তরের উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর।

জানতে চাইলে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ডাক্তার মো. জুবায়ের বলেন, ‘ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা যেন নিজেদের মধ্যে সংঘাত, বিভেদে না জড়ান। তারা যেন প্রত্যাবাসনের জন্য ধৈর্য ধারণ করেন।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সরাসরি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিটিং করেননি। তারা পৃথকভাবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। রোহিঙ্গাদের পক্ষ  থেকে আমরা উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধিদলকে একটা চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ করেছি।’

রোহিঙ্গা এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা আর বাংলাদেশে থাকতে চাই না। নিজ দেশের ভিটামাটিতে চলে যেতে চাই। যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক।’

আরেক রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ আমিন বলেন, ‘ক্যাম্পের পরিস্থিতি আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলকে আমরা মর্যাদার সঙ্গে দেশে ফেরার আবেদন জানিয়েছি।’

পরে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ে এক বৈঠকে অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। প্রতিনিধিদলের এই সফর ঘিরে ক্যাম্প এলাকাজুড়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। প্রতিটি ক্যাম্পের প্রবেশমুখে চালানো হয় তল্লাশি।

জানতে চাইলে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান হায়াত বলেন, ‘প্রতিনিধিদলটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করেছে। পরে আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। আমরা ক্যাম্পের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরেছি।’

এর আগে ৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম এ খান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন।

LEAVE A REPLY