নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে চট্টগ্রামে রাজপথ দখলে ততই মরিয়া হয়ে উঠছে রাজনৈতিক দলগুলো। পালটাপালটি কর্মসূচির মাধ্যমে কর্মী-সমর্থকদের মাঠে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপি কাল পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে। আজ শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। একইদিন না হলেও একদিন আগে-পরের এই দুই কর্মসূচিকে দুই দলের শক্তির পালটাপালটি মহড়া হিসাবেই দেখা হচ্ছে।
এদিকে বসে নেই জামায়াতও। তারা ১০ দফা দাবিতে আগামী ২২ জুলাই নগরীর লালদীঘি মাঠে বড় আকারের সমাবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে তারা পুলিশের কাছে সমাবেশ আয়োজনের অনুমতি চেয়েছে। তবে এখনো পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের নানা তৎপরতা এবং রাজধানীতে একইদিনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। দুই দলই সেখান থেকে একদফা দাবি ঘোষণা করেছে। বিএনপির একদফা সরকারের পদত্যাগ আর আওয়ামী লীগের একদফা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন। দুই দলের বিপরীতমুখী অবস্থানের প্রভাব সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও পড়েছে। শুরু হয়েছে বন্দরনগরীর রাজপথ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লড়াই।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি কাল পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করছে। নগরীর বহদ্দারহাট থেকে শুরু হয়ে মুরাদপুর, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড় হয়ে দেওয়ানহাটে শেষ হবে এই কর্মসূচি। একদফার আন্দোলন হওয়ায় এতে কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক উপস্থিতি ঘটানোর প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।
বিএনপি সূত্র জানায়, একদফার আন্দোলনে চট্টগ্রামকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। দলীয় হাইকমান্ড মনে করছে, চট্টগ্রামে বিএনপির যে সাংগঠনিক শক্তি রয়েছে তাতে এখান থেকেই সরকারকে প্রথম ধাক্কা দেওয়া সম্ভব। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে চট্টগ্রামে একের পর এক বড় আকারের সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। একে সাংগঠনিক শক্তি হিসাবেই দেখা হচ্ছে। তাই চট্টগ্রাম থেকে বড় আকারের আন্দোলন শুরু করতে চায় দলটি।
রোববার চট্টগ্রামে মেহনতি শ্রমিক জনতার বিভাগীয় মহাসমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা হয়েছে। এই চট্টগ্রাম থেকেই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পদত্যাগ ঘটিয়ে নতুন গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
এদিকে আজ বিকাল ৩টায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মসূচিতে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মীদের ব্যানার-ফেস্টুনসহ উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতোই চট্টগ্রামে মাঠে সক্রিয় হতে চাইছে জামায়াতে ইসলামী। দীর্ঘদিন প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করতে না পারা জামায়াত চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি মাঠে আগামী ২২ জুলাই সমাবেশ করতে চায়। জামায়াতের ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শনিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়ে গিয়ে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছে। তবে তাদের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি পুলিশ।
সোমবার চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তারা লালদীঘি মাঠে ১০ দফা দাবিতে সমাবেশ করবে। এ সমাবেশ বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে ছাত্র দায়িত্বশীলদের সঙ্গে নগর জামায়াতের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন বলেন, দলমত নির্বিশেষে ছাত্রজনতাকে ঐক্যবদ্ধ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ২২ জুলাই লালদীঘি ময়দানের ঐতিহাসিক সমাবেশ সফল করে স্বৈরাচারের সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্যাতিত জনগণের জন্য জামায়াত গত ডিসেম্বরেই ১০ দফা দাবি ঘোষণা করেছিল। এখন সেই দাবি আদায়ের সময়।