ফাইল ছবি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আরোপিত দানকর বৈধ ঘোষণা করা রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আবেদন খারিজ করার ফলে দানকর দিতে হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
আজ রবিবার (২৩ জুলাই) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
ড. ইউনূসের পক্ষে শুনানিতে আইনজীবী সরদার জিন্নাত আলী।
মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ চিন্তা করে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত তিনটি ট্রাস্টে যে টাকা দান করেছেন, সে দানের বিপরীতে এনবিআরের আরোপ করা দানকর বৈধ ঘোষণা করে গত ৩১ মে রায় দেন হাইকোর্ট। কর আপিল ট্রাইব্যুনালের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে ইউনূসের তিনটি রেফারেন্স আবেদন খারিজ করা হয় রায়ে। ফলে ৭৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দানে এনবিআরের দাবি করা ১৬ কোটি আট লাখ ৪০ হাজার ৫৬ টাকা দানকর ড. ইউনূসকে দিতে হবে।
এর মধ্যে তিন কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার টাকা তিনি পরিশোধ করেছেন বলে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ২১ জুন লিভ টু আপিল করেন ড. ইউনূস। আবেদনে লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি পর্যন্ত হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়। সে আবেদনটিই চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য উঠলে চেম্বার বিচারপতি শুনানির তারিখ দিয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
আর আজ রবিবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
ইউনূসের কাছে এনবিআরের পাওনা মামলার নথি থেকে জানা যায়, ড. ইউনূস ২০১১-১২ করবর্ষে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্ট ও ইউনূস সেন্টারে মোট ৬১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা দান করেন। একইভাবে ২০১২-১৩ করবর্ষে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্টে দান করেন আট কোটি ১৫ লাখ টাকা।
২০১৩-১৪ করবর্ষে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট, ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টে দান করেন সাত কোটি ৬৫ হাজার টাকা। এসব দান তিনি করেছেন নিজের মৃত্যু ও পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ চিন্তা করে।
এসব দানের বিপরীতে যথাক্রমে ১২ কোটি ২৮ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০, এক কোটি ৬০ লাখ ২১ হাজার ও এক কোটি ৫০ লাখ ২১ হাজার টাকাসহ মোট ১৫ কোটি ৩৯ লাখ ১৬ হাজার ৮০০ টাকা দানকর দাবি করে এনবিআর। এর সঙ্গে ৬৯ লাখ ২৬ হাজার ২৫৬ টাকা জরিমানাও ধরা হয়। জরিমানাসহ ইউনূসের কাছে এনবিআরের মোট পাওনা দাঁড়ায় ১৬ কোটি আট লাখ ৪৩ হাজার ৫৬ টাকা। এর মধ্যে ড. ইউনূস দানকর পরিশোধ করেন তিন কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৮ টাকা। পরিশোধের এই টাকা বাদ দিলে জরিমানাসহ ইউনূসের কাছে এনবিআর পাবে ১৫ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার ৬০৮ টাকা।
ড. ইউনূসের দাবি, যেহেতু তিনি মৃত্যু ও নিকট আত্মীয়দের কল্যাণের কথা ভেবে বিভিন্ন সময় এই টাকা দান করেছেন, ফলে তিনি কর অব্যাহতি পাবেন। দানকর আইন, ১৯৯০-এর ৪ ধারার (ছ) (জ) উপধারায় এই কর অব্যাহতির কথা বলা আছে।
‘কতিপয় দানের ক্ষেত্রে অব্যাহতি’ শিরোনামে ৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, নিম্নবর্ণিত ক্ষেত্রসমূহে কোনো ব্যক্তির কৃত দানের উপর এই আইনের অধীন কোন দানকর আরোপযোগ্য হইবে না, যথা :- (ছ) দান যদি মৃত্যু চিন্তায় করা হয়; (জ) দান যদি পুত্র, কন্যা, পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, আপন ভাই অথবা আপন বোনকে করা হয়।
এনবিআরের যুক্তি : ড. ইউনূসের এসব দান পর্যালোচনা করে এনবিআর বলেছে, ড. ইউনূস মৃত্যুচিন্তা থেকে দান করলেও বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। কেউ গুরুতর আহত হয়ে বা অসুখে মৃত্যুশয্যায় থাকলে তার অর্থ-সম্পদ নিকট আত্মীয়দের দান করা যায়। একে মৃত্যুচিন্তায় দান বলা হয়। কিন্তু ড. ইউনূস দানের সময় তেমন কোনো পরিস্থিতিতে ছিলেন না বা এখনো নেই। ফলে মৃত্যুচিন্তা থেকে তিনি দান করেছেন, এই যুক্তি অবান্তর ও অগ্রহণযোগ্য।
আর পরিবারের সদস্যদের দানের ক্ষেত্রে এনবিআরের বক্তব্য হচ্ছে- দান যদি পুত্র, কন্যা, পিতা, মাতা, স্বামী, স্ত্রী, আপন ভাই অথবা আপন বোনকে করা হয় তবে করদাতা কর অব্যাহতি পাবেন। কিন্তু ড. ইউনূস দান করেছেন ট্রাস্টে। এর মধ্যে ইউনূস সেন্টারের তিনজন ট্রাস্টির মধ্যে একজন ট্রাস্টি দাতা নিজে। আরেকজন ড. ইউনূসের আপন ভাই। আবার ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাস্ট ও ইউনূস ফ্যামিলি ট্রাস্টের ট্রাস্টিরা করদাতার নিকটাত্মীয় নন। ফলে এ ক্ষেত্রে তিনি কর অব্যাহতি পেতে পারেন না। এ দান কোনোভাবেই দানকরমুক্ত না।