স্ত্রীদের আটকে রেখে স্বামীদের কাছে মুক্তিপণ চাইছে মিয়ানমারে সেনারা

স্ত্রীদের আটকে রেখে স্বামীদের কাছে মুক্তিপণ চাইছে মিয়ানমারের সেনারা। ঘটনাটি ঘটেছে দেশটির কায়িন (কারেন) রাজ্যের তাগুন্ডাইং গ্রামে। গ্রেফতারের নামে গ্রামের বাসিন্দাদের অপহরণ করছে। পরে মুক্তিপণ বা মুক্তির শর্ত হিসাবে চাইছে চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী। 

ঘরে ঘরে ঢুকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে নারীদের। এরপর স্বামীদের বাধ্য করছে তাদের স্ত্রীদের মুক্তির জন্য চাল আনতে। ‘ভোরবেলার অভ্যুত্থানে’ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জান্তা শাসন শুরুর পর থেকেই সেনা বর্বরতা চরম আকার ধারণ করেছে কারেনে। ইরাবতী।

অপহৃত অধিকাংশই গ্রামটির স্থানীয় কৃষক ও পশুপালক। ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা থেকে পলাতক এক বাসিন্দা জানায়, ‘মিলিটারি কাউন্সিলের সৈন্যরা গ্রামের কাছে লুকিয়ে থাকে এবং গ্রামবাসীদের বিশেষ করে বাগানের শ্রমিক ও কৃষকদের গ্রেফতার করে। এর আগে ১৪ জুলাই মিয়ানমারের মিলিটারি কাউন্সিলের সৈন্যরা কারেন লিবারেশন আর্মির সঙ্গে ভয়ংকর যুদ্ধে লিপ্ত হয়। মিলিটারি কাউন্সিলের সৈন্যরা তাগুন্ডাইং গ্রামের আশপাশে অভিযানের সময় অনেক বেসামরিক সামরিককে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে। বর্তমানে তাদের নৃশংসতার কারণে গ্রামটির আশপাশে বাগান, কৃষিজমি ও খামারগুলোতে নিযুক্ত শ্রমিক কর্মকর্তারা নিরাপত্তার জন্য কর্মস্থল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এই রাজ্যেরই হপাপুন গ্রামের অবস্থা আরও ভয়াবহ।

রীতিমতো খাদ্য সংকটে দিন পার স্থানীয় গ্রামবাসীদের। এখানেও নাটের গুরু মিয়ানমারের মিলিটারি কাউন্সিলের সেনারা। তবে সীমান্তবর্তী এই গ্রামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে দেশটির বর্ডার গার্ড ফোর্সও (বিজিএফ)। রাষ্ট্রের এই দুই বাহিনী মিলে গ্রামের জল-স্থলপথ উভয়ই বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে জুলাই মাস থেকেই খাদ্য পরিবহণে দেখা দিয়েছে ব্যাপক বিপত্তি। এর আগেও স্থলপথ বন্ধ থাকলেও অন্তত জলপথে খাবার পরিবহণের অনুমতি ছিল। এখন সব দিকেই বাধা থাকায় খাদ্য ঘাটতিতে থাকা বাসিন্দারা হয়ে পড়েছে দিশেহারা। হপাপুন এক বাসিন্দা জানান, ‘নৌপথ বা রাস্তাগুলো এখনো খোলা হয়নি। সেগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। সব বন্ধ থাকায় কোনো পণ্যই এলাকায় প্রবেশ করতে পারে না। এ রকম কতদিন বন্ধ থাকবে তা অনিশ্চিত। ভাত জোগাড় করাটাও এখন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।’ 

স্থানীয়দের অভিযোগ শুধু খাবারই নয়, বরং এলাকার বৈদ্যুতিক সংযোগ, ইন্টারনেট, ফোন লাইন সবই বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে। খাদ্য পরিবহণের প্রধান মাধ্যমগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে করে স্থানীয়দের জীবিকা নির্বাহ করাটাই একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানকার আরেক বাসিন্দা জানান, ‘অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ও পানি সংকটের কারণে কৃষকরা এমনিতেই ধান চাষে সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে, উপরন্তু এ পরিস্থিতির কারণে খাদ্যের দাম ব্যাপক বেড়েছে। যেখানে ২৪ পাই চালের আগের মূল্য ছিল মাত্র ৮০০০ কিয়াট তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০,০০০ কিয়াট। স্থানীয়দের সূত্রমতে, মিলিটারি কাউন্সিল সেখানকার বেসামরিকদের ভবন, চার্চ ও স্কুলগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। 

LEAVE A REPLY