ঘোষণার পরও বাজারে বন্ধ হয়নি খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি

সরকারের পক্ষ থেকে বারবার নির্দেশনা দেওয়ার পরও খোলাবাজারে সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধ হয়নি। খুচরা ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, এই নির্দেশনার কথা তাঁরা জানেন না। আর বাজার তদারকি প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, অনেক আগেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

আইন অনুসারে ড্রামে খোলা তেল বিক্রি করা যাবে না।

এ জন্য গত ২৬ জুলাই একটি কর্মশালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছিলেন, ‘আইন অনুসারে ১ আগস্ট (গতকাল) থেকে প্যাকেটজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করতে হবে। খোলা তেল বিক্রি করা যাবে না। আমরা খোলা তেল বিক্রি বন্ধে মাঠে নামব।’

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) রাজধানীর শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১১ নম্বরে অন্তত ১০টি মুদি দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দোকানগুলোয় বড় ড্রাম ও ছোট টিনে বিক্রি করা হচ্ছে পাম অয়েল ও সয়াবিন তেল।

এসব দোকানি জানান, তাঁরা জানেন না খোলা তেল বিক্রি করা যাবে না। তাঁরা বলছেন, খোলা তেল বিক্রি না হলে নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ আরো বাড়বে। 

শেওড়াপাড়া মেট্রো রেলের পাশের কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার বেশির ভাগ দোকানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। ওখানকার হেনা ট্রেডার্সের মালিক মো. হাকিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খোলা তেল বিক্রি করি প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দরে।’ সরকার খোলা তেল বিক্রি না করতে নির্দেশ দিয়েছে, সে সম্পর্কে জানেন কি না? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘না, আমি জানি না।’

মিরপুর ১১ নম্বরে বিহারি ক্যাম্পের পাশের কাঁচাবাজার নিউ সোসাইটি মার্কেটের চান মিয়ার মুদি দোকানে বড় ড্রাম ও ছোট টিনের জারে বিক্রি করা হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল। ১৮০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশ্ন করে জানা গেল, ওই দোকানি জানেনই না যে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না। তিনি বলেন, “এখানকার সব দোকানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে।

বাজার কমিটি থেকেও আমাদের কিছু বলা হয়নি। প্রতিদিন দুই টিন তেল বিক্রি করি। এখানে অনেকে এসে বলে, ‘এক পোয়া (২৫০ গ্রাম) তেল দাও।’ আবার অনেকে বলে, ‘২০ টাকার তেল দাও।’ এখানে গরিব মানুষ বেশি।” 

ওই বাজারে ৩৫০টির মতো মুদি দোকান রয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগেই খোলা তেল বিক্রি করা হয়। 

নিউ সোসাইটি মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম গাউস সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা আসেনি। খোলা তেলের চেয়ে বোতলজাত তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি। এখন গরিব মানুষ যারা আছে তাদের কী হবে? তাদের কাছে তো ৫০০ টাকা নেই যে বড় বোতল কিনবে। এই সিদ্ধান্ত গরিব মানুষকে মারার সিদ্ধান্ত।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ সয়াবিন তেল, বাকি ৭০ শতাংশ পাম অয়েল। ৩০ শতাংশ সয়াবিনের অর্ধেক বোতলে এবং অর্ধেক খোলা অবস্থায় বিক্রি করা হয়। 

এ এইচ এম সফিকুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশে ভালো কিছু করতে গেলে নানা কাহিনি শুরু হয়। গত বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া ছিল। সর্বশেষ বৈঠকে জানানো হয়েছিল মিলগুলো প্রস্তুত। 

নিম্ন আয়ের মানুষের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা বেশি ব্যবহার করে পাম অয়েল। আর যারা খোলা তেল ব্যবহার করে তারা পাম অয়েলই ব্যবহার করে। সয়াবিনের কথা বলে পাম অয়েলের দাম বেশি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। খোলা তেল চাইলেই তো বন্ধ করতে পারব না। এর অনেক নেতিবাচক দিক আছে। মিলগুলোকে চাপ দেব যেন তারা ধীরে ধীরে খোল তেল উত্পাদন বন্ধের দিকে যায়। খোলা তেল বিক্রি বন্ধে একটু সময় দিতে হবে।’ 

ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল সারা দেশে তাদের ৬০টি টিম বাজার মনিটর করেছে। 

LEAVE A REPLY