জেলের সাজা স্থগিত, এবার কি সংসদ সদস্য পদ ফেরত পাবেন রাহুল?

মোদি পদবি অবমাননা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে বড় স্বস্তি পেলেন ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। বিচারপতি আর এস গাভাই ও পি কে মিশ্রর বেঞ্চ শুক্রবার রাহুলের দুই বছরের জেলের সাজার ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। শুধু সাজার ওপর স্থগিতাদেশ নয়, সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। ফলে এসংক্রান্ত সুরাট আদালতের রায় আপাতত কার্যকর হচ্ছে না।

সেই সঙ্গে ওয়েনাড়ের বরখাস্ত সংসদ সদস্য রাহুলের পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভবনাও তৈরি হলো।

এ ছাড়াও দুই বিচারপতির বেঞ্চ সুরাট আদালতের রায়ের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘কেন রাহুল গান্ধীকে অপরাধমূলক মানহানির মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি, দুই বছরের জেলের সাজা দেওয়া হলো, তার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণ সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দেখাতে পারেননি।’ ওই মেয়াদের সাজা দেওয়ার ফলে শুধু সংসদ সদস্য পদ হারানো নয়, ছয় বছরের জন্য তার ভোটে লড়াও নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। সুরাট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সেই রায় বহাল রেখেছিল সুরাট দায়রা আদালত ও গুজরাত হাইকোর্টও।

কিন্তু শুক্রবারের সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের ফলে ২০২৪ সালে রাহুলের ভোটে লড়ার পথেও বাধা দূর হলো।

আইনজীবীদের একাংশ বলছেন, অপরাধমূলক মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা নয়, রাহুলের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের মূল প্রশ্ন সাজার মেয়াদ নিয়ে। জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারা অনুযায়ী সাজার মেয়াদ দুই বছরের চেয়ে এক দিন কম হলেও দোষী জনপ্রতিনিধির পদ খারিজ হবে না। বলবৎ হবে না, ছয় বছর পর্যন্ত ভোটে লড়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞাও।

ফলে রাহুলের উপর ‘সংসদীয় নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহারের সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করছেন তারা।

শুক্রবারের সুপ্রিম স্থগিতাদেশের পরে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাহুলের সংসদ সদস্য পদ ফেরানোর দাবি তোলা হয়েছে স্পিকারের কাছে। কংগ্রেস নেতা কেসি বেণুগোপাল বলেন, ‘আমরা আশা করব স্পিকার যেমন দ্রুততার সঙ্গে রাহুলের পদ খারিজ করেছিলেন, তেমনই সক্রিয়তা দেখা যাবে পদ ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও।’ লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘রাহুলকে পদ ফিরিয়ে দিতেই হবে।’

‘অপরাধমূলক মানহানি’ মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাহুলের দুই বছর জেলের যে সাজা গত ২৩ মার্চ সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত দিয়েছিলেন, তার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে রাহুলের আবেদন গত ৭ জুলাই খারিজ করে দিয়েছিলেন গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছকের বেঞ্চ।গুজরাট হাইকোর্টের আগে সুরাটের দায়রা আদালতও সাজার রায় বহাল রেখেছিলেন। সেই সাজার রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ১৭ জুলাই রাহুলের আইনজীবী শীর্ষ আদালতে আবেদন জানিয়েছিলেন। রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির পক্ষ থেকে আবেদনে বলা হয়, ‘যদি গুজরাট হাইকোর্টের ৭ জুলাইয়ের রায় স্থগিত না করা হয়, তবে তা বাকস্বাধীনতা, মত প্রকাশ, স্বাধীন চিন্তাভাবনার কণ্ঠরোধের পরিবেশ তৈরি করবে।’

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় কর্ণাটকের কোলারে ‘মোদি’ পদবি তুলে আপত্তিকর মন্তব্যের দায়ে গত ২৩ মার্চ গুজরাটের সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক এইচ এইচ বর্মা দুই বছর জেলের সাজা দিয়েছিলেন রাহুলকে। গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী তথা বিজেপি বিধায়ক পূর্ণেশ মোদির দায়ের করা ওই ‘অপরাধমূলক মানহানি’ মামলায় দোষী রাহুলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের জন্য তাকে ৩০ দিন সময় দিয়েছিলেন বিচারক। সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায়ের ভিত্তিতে ২৪ মার্চ লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা ভারতীয় সংবিধানের ১০২(১)-ই অনুচ্ছেদ এবং জনপ্রতিনিধিত্ব আইন (১৯৫১)-এর ৮(৩) নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাহুলের সংসদ সদস্য পদ খারিজ করেছিলেন।

এরপর রাহুল তাকে দোষী ঘোষণা এবং সাজার রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে গত ৩ এপ্রিল সুরাটেরই দায়রা আদালতে (সেশনস কোর্ট) আবেদন করেছিলেন। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল অতিরিক্ত দায়রা বিচারক আরপি মোগেরা সেই আবেদন খারিজ করে সাজা কার্যকরের রায় বহাল রাখেন। ফলে সংসদ সদস্য পদ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা হাতছাড়া হয় তার।

প্রসঙ্গত, বিচারক মোগেরা এক সময় একাধিক ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি নেতা (বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) অমিত শাহের আইনজীবী।

সাজার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর আবেদনের প্রেক্ষিতে অভিযোগকারী বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদি ও গুজরাট সরকারকে গত ২১ জুলাই নোটিশ পাঠিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। দুই পক্ষ থেকেই সাজা মওকুফের বিরোধিতা করা হয়েছিল। অন্যদিকে, রাহুলের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি শীর্ষ আদালতে অভিযোগ করেছিলেন, এই মামলায় বিচার প্রক্রিয়ার অবমাননা হয়েছে।

গত ৭ জুলাই গুজরাট হাইকোর্টের বিচারপতি হেমন্ত প্রচ্ছকের বেঞ্চও সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের রায় বহাল রাখায় সাজা এড়াতে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন কেরালারর ওয়েনাড়ের সাবেক কংগ্রেস সংসদ সদস্য। 
আইনজীবীদের একাংশ মনে করেছেন, শীর্ষ আদালত সুরাট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সংসদ সদস্য পদ ফিরে পেতে পারেন রাহুল। সুরাট দায়রা আদালত ও গুজরাট হাইকোর্টের মতো রাহুলের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে তার জেলে যাওয়ার আশঙ্কা আরো বাড়ত। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ জেলযাত্রা থেকে রেহাইয়ের পাশাপাশি রাহুলের সংসদ সদস্য পদ ফেরানোর পথও প্রশস্ত করল বলে মনে করছে আইন বিশেষজ্ঞদের অনেকে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

এসংক্রান্ত আরো খবর :

LEAVE A REPLY