বিশ্বকে নৌ দুর্গে ঘিরছে চীন

বিশ্বকে নৌ-দুর্গে ঘিরে ফেলতে চাইছে চীন। সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সামরিক অগ্রগতির কিছু পদক্ষেপ থেকে এই পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, চীন এশিয়া ও আফ্রিকায় বিদেশি নৌঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। ইতোমধ্যেই হর্ন অফ আফ্রিকার উপকূলে জিবুতিতে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভির (পিএলএএন) একটি বিদেশি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। 

এখন চলছে পরবর্তী নৌঘাঁটি স্থাপনের পরিকল্পনা। এজন্য সম্ভাব্য আটটি স্থান হাইলাইট করা হয়েছে। চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলো ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪৬টি দেশে ৭৮টি বন্দর সম্প্রসারণ বা নির্মাণের জন্য ১২৩টি প্রকল্পের অর্থায়নে ২৯.৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান। 

মার্কিন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এইডডেটা দ্বারা প্রকাশিত একটি বিশ্লেষণ অনুসারে, আগামী দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে চীনা নৌঘাঁটি স্থাপনের আটটি সম্ভাব্য স্থান হাইলাইট করা হয়েছে। স্থানগুলো হলো-শ্রীলংকার হাম্বানটোটা, নিরক্ষীয় গিনির বাটা, পাকিস্তানের গোয়াদর, ক্যামেরুনের ক্রিবি, কম্বোডিয়ার রিম, ভানুয়াতুর লুগানভিল, মোজাম্বিকের নাকালা ও মৌরিতানিয়ার নোয়াকচট। এইডডেটা গবেষকরা দাবি করেন, এ পরিকল্পনা চীনের সামরিক উন্নয়নের জন্য বিদেশি নৌঘাঁটির উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়। এটি শিপিং রুটগুলোকে রক্ষা করার এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের নিষেধাজ্ঞা প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার আশা করে। 

হাম্বানটোটা, শ্রীলংকা 
এইডডেটা অনুসারে, শ্রীলংকার হাম্বানটোটা বন্দরকে ভবিষ্যতের একটি পরিকল্পনার বেসের জন্য সবচেয়ে সম্ভাব্য স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ২০১০ সালে খোলা বন্দরটি একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উন্নয়ন ব্যাংক চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে ৩০৬.৭ মিলিয়ন ডলার ঋণ দ্বারা অর্থায়ন করা হয়েছিল। চীন সুবিধার ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ অনুশীলন করে। হাম্বানটোটাকে প্রায়শই চীনের ‘ঋণ ফাঁদ কূটনীতি’র উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। 

বাটা, নিরক্ষীয় গিনি
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের সূত্রগুলো গিনির বন্দরনগরী বাটার একটি ঘাঁটিতে চীনা আগ্রহের বিষয়ে একটি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। তবে চীন থেকে তা বারবার অস্বীকার করা হয়েছিল। ঘাঁটিটি বাণিজ্যিক বিনিয়োগের প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।

গোয়াদর, পাকিস্তান 
চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক কৌশলগত ও অর্থনৈতিক উভয় ভাবেই জড়িত। সামরিক রপ্তানির জন্য পাকিস্তান হলো বেইজিংয়ের একক বৃহত্তম গ্রাহক। পাকিস্তানের নৌ বাহিনী চীনা অস্ত্রের বৃহত্তম বিদেশি ক্রেতা হয়ে উঠেছে। বিশাল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে গোয়াদর একটি বড় উপাদান। তাই চীনের নৌঘাঁটির জন্য এটিকেও সম্ভাব্য স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

লুগানভিল, ভানুয়াতু
গবেষকরা জানান, ভানুয়াতুর এসপিরিতু সান্টো দ্বীপের পোর্ট লুগানভিলে অথায়ন করা হয়েছে। আরও বলেন, যদিও আমাদের ডাটা এই অঞ্চলের বন্দর অবকাঠামোতে সীমিত চীনা বিনিয়োগ দেখায়। তথ্য অনুসারে, ৯৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়। যদিও এটি তেমন ছোট বিনিয়োগও নয়। 

নাকালা, মোজাম্বিক 
মোজাম্বিকে চীনের বন্দর বিনিয়োগ অন্যান্য স্থানের মতো একই মাত্রায় ছিল না। চীন বেইরা ও নাকালা উভয় ক্ষেত্রেই নির্মাণ বা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করেছে। যদিও বড় যুদ্ধ জাহাজের জন্য বেইরা সম্ভবত খুব অগভীর। তবে নাকালা সবচেয়ে বেশি অর্থবহ হবে। কারণ এতে প্রচুর চীনা বিনিয়োগ দেখা গেছে। নাকালা একটি গভীর জলের বন্দর। 

LEAVE A REPLY