দ্বিতীয় দিনেও চট্টগ্রাম পানিতে থইথই

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় দিনের মতো পানিতে তলিয়ে ছিল মহানগরীর অধিকাংশ নিচু এলাকা। শনিবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হলে সড়ক ও অলিগলিতে পানি বাড়তে শুরু করে। পানি ঢুকে পড়ে বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। হাঁটু পানিতে তলিয়ে ছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি ভবনও। জলাবদ্ধতার কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেকে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। দ্বিতীয় দিনের মতো বাসায় আটকে থাকা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেয়রকে সকালে নির্ধারিত গাড়ি রেখে রিকশায় ঘর থেকে বের হতে দেখা গেছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, রোববারও ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রামে। ফলে এদিনও জলাবদ্ধতায় আটকে থাকতে হবে নগরবাসীকে।

শনিবার দুপুর ১২টায় নগরীর মুরাদপুরে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের দুই পাশে যানবাহনের দীর্ঘ জট। মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সড়কে কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমরসমান পানি জমেছে। পানিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বহু যানবাহন বিকল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পানি ঢুকেছে বহদ্দারহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি ভবনের নিচতলায়। চট্টগ্রাম ওয়াসার নিচতলায়ও পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া নগরীর বাকলিয়া মিয়াখান নগর, চকবাজার, ষোলশহর, হালিশহর, মুরাদপুর, চান্দগাঁও, বলিরহাট, ছোট পুল, বড় পুল, মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ আবাসিক, রিয়াজুদ্দিন বাজার, মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নং গেট এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতায় সকাল থেকে পানিবন্দি মানুষ। এদিন বহদ্দারহাটে চসিক মেয়রের নিজস্ব বাসভবনের সামনেও ছিল কোমর পানি। জলাবদ্ধতার কারণে গত শুক্রবার থেকে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। তবে শনিবার সকালে শেখ কামালের শোকসভায় অংশ নিতে তাকে পানি মাড়িয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। এ সময় তাকে রিকশায় বাড়ির সামনে কোমর সমান পানি পার হতে দেখা যায়।

কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে কর্মজীবীদের। রাস্তায় গণপরিবহণ কম, রিকশা-অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করার কথা জানিয়েছেন যাত্রীরা। অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। নগরীর টাইগার এলাকায় গাড়ির জন্য অপেক্ষমাণ মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘বহদ্দারহাট যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টার বেশি সময় অপেক্ষা করছি, কিন্তু কোনো গণপরিবহণ পাচ্ছি না। সিএনজি অটোরিকশাগুলো প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছে। কী করব বুঝতে পারছি না।’

আক্ষেপ করে চকবাজারের ব্যবসায়ী মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টি হলেই এই এলাকা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। চাক্তাই খালের ময়লা-আবর্জনা ভাসতে ভাসতে দোকানে ঢুকে যায়। জিনিসপত্র নষ্ট হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পুরো দোকান আবার পরিষ্কার করতে হয়। এভাবেই আমাদের দিন কাটছে।’

শনিবার বিকালে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি নাথ যুগান্তরকে বলেন, ‘শনিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আমবাগান আবহাওয়া অফিস। সন্ধ্যা ৬টার পর মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হবে। রোববার বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিম্নচাপের কারণে এ বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টি আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে। যেসব এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হবে সেসব এলাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে।’

LEAVE A REPLY