ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, গোপন নথি ফাঁস

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে দাবি করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক নিউজ আউটলেট দ্য ইন্টারসেপ্ট পাকিস্তানের ফাঁস হওয়া একটি সরকারি নথি সাইফার এর বরাত দিয়ে এই খবর জানিয়েছে। 

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধে তখন নিরপেক্ষ অবস্থান নেন ইমরান খান। এতে ক্ষুব্ধ হয় যুক্তরাষ্ট্র।

এরপর ২০২২ সালের ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বৈঠকে পাকিস্তান সরকারকে উদ্বুদ্ধ করে, ইমরানকে যেন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর বিনিময়ে ছিল ইসলামাবাদের সাথে উষ্ণ সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি আর তা না করলে পাকিস্তানকে একঘরে করে রাখার হুমকিও দিয়েছিল।  

নথিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং তৎকালীন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ খান মধ্যে বৈঠকের বিবরণ রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্টারসেপ্ট জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর একটি অংশ পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তাদের এ নথিটি দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মাজিদ খান এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

সংবাদমাধ্যমটি আরো জানিয়েছে, ডোনাল্ড লু পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের কাছে বলেছিলেন ইউক্রেন ও রাশিয়া যুদ্ধে ইমরান খান নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র খুশি হতে পারেনি। ওই সময় পাক দূত বলেছিলেন, তার আশা এ বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু ডোনাল্ড লু বলেছিলেন, সম্পর্ক ইতোমধ্যে কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে।

কিন্তু নেতৃবৃন্দে পরিবর্তন আসলে সেটি আবার ঠিক হবে।  এ বিষয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করে তার মনে হয়েছে ইউক্রেন ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান ইমরান খানের নিজের নীতিগত সিদ্ধান্ত।

পাকিস্তান সরকারের ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের এক মাস পরে পার্লামেন্টে একটি অনাস্থা ভোট হয়, যার মাধ্যমে ইমরান ক্ষমতা থেকে অপসারিত হন। পাকিস্তানের ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর সমর্থনে এই ভোট আয়োজন হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

অনাস্থা ভোটের বিষয়ে লু  বলেছিলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় কিনা তা দেখার জন্য আমাদের কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে, (যদি হয়) এই ইস্যুতে আমাদের মধ্যে বড় মতবিরোধ থাকবে না এবং ক্ষতগুলো খুব দ্রুত সেরে যাবে।আমি মনে করি, যদি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট সফল হয় তবে ওয়াশিংটনে পক্ষ থেকে সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। ২০২২-এর ৮ মার্চ রবৈঠকের একদিন পর সংসদে ইমরান খানের বিরোধীরা অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।

ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালেয়ের কর্মকর্তাদের সেই বৈঠক নিয়ে গত দেড় বছর ধরে পাকিস্তানে বিভিন্ন বিতর্ক, চিন্তা ও জল্পনা-কল্পনা দেখা গেছে। পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র কর্মকর্তাদের বৈঠকের এক মাস পরই অনাস্থা ভোট ক্ষমতা হারান ইমরান। এই ঘটনার পর, এ বছরের ৫ আগস্ট ইমরান খানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও পরবর্তীতে পাঁচ বছর রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। 

এদিকে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনকে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মুমতাজ জাহরা বালোচ বলেন, ফাঁস হওয়া নথির বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। তথ্যমন্ত্রী মরিয়ম আওরঙ্গজেব এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবালও কোনো মন্তব্য করেননি। অপরদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর প্রকাশিত নথির সত্যতা সম্পর্কে মন্তব্য করেনি। তারা বলেছে, নথির বিষয়বস্তুতে এরকম কোনো কিছু ছিল না, যা দেখে মনে হতে পারে পাকিস্তানের ক্ষমতায় কে আসবে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা থাকতে পারে।

সূত্র : দ্য ইন্টারসেপ্ট

LEAVE A REPLY