কুলাউড়ায় পাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযান আটক ১৩

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ে শনিবার সকালে প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে নারী-শিশুসহ ১৩ জঙ্গিকে আটক করেছে কাউন্টার টেররিজম ও সোয়াত টিম। 

আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন চারজন পুরুষ, ছয়জন নারী ও তিন শিশু। ‘অপারেশন হিল সাইট’ নামে এই অভিযান শেষে জঙ্গিদের ঢাকায় নিয়ে যায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) টিম। 

আস্তানা থেকে জঙ্গিদের আটকের পর শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপস্থিত সাংবাদিকদের অভিযানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্রিফ করেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান। শুক্রবার রাত ৮টা থেকে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের জুগিটিলায় বাইশালী নামক এলাকায় একটি টিলার ওপর নতুন স্থাপিত একটি বাড়ি ঘিরে রাখে আইশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার সকাল ৭টার দিকে বাড়িটিতে অভিযান শুরু হয়। 

যা বললেন সিটিটিসি প্রধান : মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল নতুন একটি উগ্রবাদী সংগঠন ব্যাপক সংখ্যক লোকদের উগ্রবাদের দীক্ষা দিয়েছে। সেসব লোকজন হিজরতের জন্য ঘর থেকে বের হয়েছেন। শুরুতে আমাদের কাছে তথ্য ছিল মৌলভীবাজারের যে কোনো একটি পাহাড়ে তারা আস্তানা তৈরি করেছে। আমরা কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা সম্পর্কে চূড়ান্ত তথ্য পাই।

তিনি বলেন, ঢাকায় আমরা একজনকে গ্রেফতার করেছি, যিনি এই জঙ্গি আস্তানা থেকে তার পরিবারকে আনার জন্য গিয়েছিলেন। সিটিটিসি প্রধান বলেন, কুলাউড়ায় জঙ্গি আস্তানা থেকে বিনা বলপ্রয়োগে আমরা তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাদের হেফাজতে নেওয়ার পরে আমরা জঙ্গি আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে প্রায় তিন কেজি বিস্ফোরক ও ৫০টির মতো ডেটোনেটর উদ্ধার করি। যা দিয়ে গ্রেনেডসহ হাই এক্সপ্লোসিভ তৈরি করা হয়। 

এছাড়া তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ সামগ্রী; কমব্যাট বুট, বক্সিন ব্যাগ এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়েছে, যোগ করেন তিনি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এটি নতুন একটি সংগঠন, এর নাম ‘ইমাম মাহদির কাফেলা’। বাংলাদেশে যেসব নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আছে, সেগুলোর বাইরে এটি একটি নতুন সংগঠন। এই সংগঠনের যে মূল ব্যক্তি তার নামও আমরা পেয়েছি। আশা করি, তার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমরা সক্ষম হব।

তিনি আরও বলেন, এই সংগঠনের প্রধানের নামও নিশ্চিত হওয়া গেছে। মাত্র ৭ দিন থেকে তারা দাওয়াতি কার্যক্রম শুরু করে। এখানে অভিযান পরিচালনার পর কেউ পালিয়ে যেতে পারেনি। এখানে যারা আসা-যাওয়া করত তাদের নামের তালিকা আছে। তবে তিনি এই অভিযানে জঙ্গি সংগঠনকে অঙ্কুরেই নস্যাৎ করা হয়েছে বলে জানান।

বিকাশে আসত টাকা : আস্তানার বাসিন্দা জয়নাল মিয়া প্রায় দিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিকাশে তুলতেন। ঘটনার একদিন আগে ৬০ হাজার টাকা বিকাশ থেকে তুলতে যান তিনি। টাকা বেশি থাকায় ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে তুলতে না পেরে রবিরবাজার থেকে তোলেন। 

বসতি স্থাপন করেন যেভাবে : স্থানীয় বাসিন্দা রফিক মিয়ার কাছ থেকে খাস জায়গা কেনেন জঙ্গিরা। প্রথমে জঙ্গি আস্তানায় পুরুষরা বসবাস করেন। ঘটনার আগের দিন শিশুসহ কয়েকজন মহিলাকে এখানে আসতে দেখা যায়। এ থেকেই স্থানীয়দের সন্দেহ হয়।

আটককৃতরা হলেন : সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানার মাইজবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা থানার কালনা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানার রসুলপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৭) এবং তাদের ১২ মাসের শিশু আবিদা। 

সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের ওমর আলীর পুত্র শরিফুল ইসলাম (৪০), পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের আব্দুছ ছত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২) ও তার ১৮ মাসের শিশুকন্যা জুবেদা ও হুজাইফা (৬), নাটোর জেলা ও সদর থানার চাঁদপুর গ্রামের সোহেল তানজীমের স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০), বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানার নিজবলাই গ্রামের সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০) এবং তার মেয়ে হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০)। 

খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. ঊর্মি বিনতে সালাম। অভিযানে অংশ নেন যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামান, সিটিটিসির নাজমুল ইসলাম, সোয়াত কামান্ডার এডিসি জাহিদ, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. মঞ্জুর রহমান পিপিএম, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুছ ছালেক প্রমুখ।

এদিকে কর্মধা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মাহমুদা আক্তার বলেন, যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে ওই বাড়ির বাসিন্দা এরা নয়। কয়েক দিন থেকে এরা এখানে বসতি গেড়েছে। এলাকার কারো সাথে খুব একটা মিশত না। চলাচল ছিল সন্দেহজনক।

কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম আজাদ জানান, তার ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের বাইশালী বাড়ি নামক পাহাড়ি এলাকায় এরা বসতি শুরু করে। কিভাবে এখানে এসেছে তা নিশ্চিত নয়। বসতি খুব বেশি দিন না হওয়ায় জানাজানিও হয়নি।

LEAVE A REPLY