বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ

টাঙ্গাইলের বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমদ হত্যা মামলার বিচারকাজ কোনো রকম ব্যর্থতা ছাড়া আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আজ রবিবার এ আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আসামি সহিদুর রহমান খান মুক্তির লিভ টু আপিল খারিজ করে এ আদেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব।

সঙ্গে ছিলেন আশরাফুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাওয়ার হোসেন বাপ্পী।

সৈয়দ মামুন মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন, এ মামলায় ১৩ আসামির মধ্যে ৬ আসামি জামিনে আছে। সহআসামিরা জামিনে থাকলে মামলার অন্য আসামিরা জামিন পাওয়ার অধিকার রাখে।

কিন্তু আদালত আমাদের বক্তব্য না শুনে আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, আসামি সহিদুর রহমান খান মুক্তি হাইকোর্টে বিচারাধীন জামিন আবেদনের তথ্য গোপন করতে আরেকটি জামিন আবেদন করেন। বিষয়টি নজরে আনার পর আদালত জামিন আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছিলেন। এই আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে আবেদন করা হয়েছিল।

চেম্বার আদালত জরিমানা স্থগিত করে আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।

আইন কর্মকর্তা বাপ্পী কালের কণ্ঠকে বলেন, এ মামলায় মোট ৩৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যের পর জেরাও শেষ হয়েছে। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্য নেওয়ার তারিখ রয়েছে। মোদ্দাকথা হচ্ছে, মামলার বিচার প্রায় শেষ। তাছাড়া আসামি সহিদুর রহমান খান মুক্তির বিরুদ্ধে এ হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে।

তার ষড়যন্ত্রেই ফারুক আহমেদকে হত্যা করা হয়েছে। সহআসামি দুজন তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তা উল্লেখ করেছেন। আর তিন জন আসামি এই স্বীকারোক্তিকে সমর্থন করেছেন। সর্বোচ্চ আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে লিভটু আপিল খারিজ করে মামলাটির বিচারকাজ ছয় মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন কোনো রকম ব্যর্থতা ছাড়া।

২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ তার কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

পরে গোয়েন্দা পুলিশ রাজা ও মোহাম্মদ আলীর নামের দুই জনকে ২০১৪ সালের অগাস্ট গ্রেপ্তার করে। ওই দুই আসামির জবানবন্দিতে এ হত্যায় তৎকালীন সাংসদ আমানুর রহমান খান রানা এবং তার অন্য তিন ভাই পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকণ ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে।

তার পর পরই আমানুর ও সহিদুরসহ চার ভাই আত্মগোপনে চলে যান। পরে আমানুর ২২ মাস পলাতক থাকার পর আদালতে আত্মসর্মপণ করেন। প্রায় দুই বছর হাজতে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। এদিকে ছয় বছর আত্মগোপনে থাকার ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সকালে সহিদুর রহমান খান মুক্তি টাঙ্গাইল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন আদালত মুক্তিকে জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ মামলায় একটি জামিন আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় সম্প্রতি আরেকটি জামিন আবেদন করেন মুক্তি। নতুন জামিন আবেদনের শুনানিতে পুরুনো জামিন আবেদনের বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ তুলে ধরলে গত ১৯ জুলাই নতুন জামিন আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন। সেই সঙ্গে তথ্য গোপন করার জন্যে সহিদুর রহমান খান মুক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। 

LEAVE A REPLY