দ. আফ্রিকায় ভবনে আগুন : ৭ শিশুসহ নিহতের সংখ্যা ৭০ ছাড়াল

দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্য জোহানেসবার্গে বৃহস্পতিবার একটি পাঁচতলা ভবনের অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত শিশুসহ ৭০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে শহরটির জরুরি পরিষেবাগুলো জানিয়েছে। এ ছাড়া আরো ৫২ জন আহত হয়েছে।

জরুরি ব্যবস্থাপনা পরিষেবার মুখপাত্র রবার্ট মুলাউদজি বলেছেন, কেউ কেউ ধোঁয়ার কারণে শ্বাসজনিত সমস্যায়। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

মুলাউদজি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৭৩ জন মারা গেছে এবং ৫২ জন আহত হয়েছে, যাদের চিকিৎসাসেবার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’

অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে অন্তত সাতটি শিশু ছিল, যা এ ঘটনাকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে মারাত্মক অগ্নিকাণ্ডের একটিতে পরিণত করেছে। সবচেয়ে ছোট শিশুটির বয়স দুই বছরেরও কম বলে জানান মুলাউদজি। এ ছাড়া আরো কয়েকটি শিশুর দেহ এমনভাবে পুড়ে গেছে যে তাদের শনাক্ত করার উপায় নেই।

ঘটনাস্থলে অগ্নিনির্বাপককর্মীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেছেন জানিয়ে মুলাউদজি বলেন, এখন অনুসন্ধান ও পুনরুদ্ধারের কাজ চলছে। স্থানীয় সম্প্রচারকারী ইএনসিএকে তিনি বলেন, ‘আমরা দেহ উদ্ধারের জন্য এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে যাচ্ছি।’

ঘটনাস্থলে থাকা এএফপির একজন প্রতিবেদক জানান, জরুরি পরিষেবাগুলো ভবন থেকে পুড়ে যাওয়া মরদেহগুলোকে বের করে আনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভবনের বাইরে রাস্তায় দেহগুলো কম্বল ও চাদরের নিচে বিছিয়ে রাখা হয়েছে।

মুলাউদজি বলেছেন, ‘এটি সত্যিই জোহানেসবার্গ শহরের জন্য একটি দুঃখের দিন…২০ বছরের বেশি সময় চাকরি করছি, কিন্তু আমি কখনো এ রকম কিছু দেখিনি।’

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ কী তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হয়নি। জননিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা নগরীর মেয়র কমিটির সদস্য এমজিনি তসওয়াকু বলেছেন, কাঠামোর ভেতরে আলো জ্বালানোর জন্য ব্যবহৃত মোমবাতি একটি সম্ভাব্য কারণ।

বন্ধ নিরাপত্তা গেট
ভবনটি দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক কেন্দ্রের ব্যাবসায়িক জেলা হিসেবে ব্যবহৃত একটি বঞ্চিত এলাকায় অবস্থিত। মুলাউদজি জানান, এটি একটি অনানুষ্ঠানিক বসতি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

অনেকেই সেখানে অবৈধভাবে থাকতে পারেন বলে ধারণা করছেন তিনি।

তসওয়াকু বলেন, ‘ভবনটি ভেতরেই একটি (নিরাপত্তা) গেট ছিল। সেটি বন্ধ ছিল, যাতে লোকেরা বাইরে বের হতে না পারে।’ ওই গেটে অনেক পোড়া লাশ পাওয়া গেছে।

শহরের কেন্দ্রস্থলে অব্যবহৃত ভবনগুলোর অবৈধ দখল ব্যাপক। জানা গেছে, অনেক ভবনই অপরাধী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যারা দখলদারদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে।

কর্তৃপক্ষের অনুমান, ভেতরে ‘৮০টিরও বেশি খুপরি’ স্থাপন করা হয়েছিল। মুলাউদজি বলেন, ‘ব্যবহৃত দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন খুব দ্রুত ভবনের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়ে।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দক্ষিণ আফ্রিকায় এ অগ্নিকাণ্ডটি সবচেয়ে মারাত্মক ও বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে জোহানেসবার্গের কাছে একটি জ্বালানি ট্যাংকার বিস্ফোরণে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জুন মাসে শহরের একটি জরাজীর্ণ ভবনে আগুনের লেলিহান শিখা ১০ বছরের কম বয়সী দুটি শিশুকে হত্যা করেছিল, যারা একটি অ্যাপার্টমেন্টে তালাবদ্ধ ছিল।

সূত্র : এএফপি

LEAVE A REPLY