নয়াদিল্লি এখন মোগল আমলের লালকেল্লা

সম্রাট শাহজাহানের শাসনামলে মোগল শৈলীতে নির্মিত ভারতের অসংখ্য ইতিহাসের সাক্ষী ‘লালকেল্লা’। পুরো দুর্গকে পাহারা দিয়েছে ৭৫ ফুটের উঁচু দেওয়াল। সেই সঙ্গে হাজার হাজার সৈন্য। 

জি-২০ সম্মেলন ঘিরে পুরান দিল্লির সেই লালকেল্লার চেহারায় এখন ফিরে এসেছে নয়াদিল্লিতে। হাজার হাজার পুলিশ ঘিরে ফেলেছে নয়াদিল্লির ৪২.৭ বর্গফুটের সীমানা। নিরাপত্তা টহল আর জমকালো আয়োজনে পুরো শহর তটস্থ। 

জি-২০ সম্মেলন উপলক্ষ্যে সম্মেলনকে চূড়ান্ত রূপ দিতে ব্যস্ত দিল্লির ট্রাফিক পুলিশ। নয়াদিল্লির সব গোলচত্বর, চৌরাস্তা ও সীমান্তবর্তী এলাকায় মোতায়েন করা হবে ১০ হাজার পুলিশ। তাদের মধ্যে ৬০০ জন নারীও থাকবেন। 

৩০টি এলাকার মুখ ও ৪০০টি মোড় চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে সহজে যান চলাচলের জন্য কর্মী মোতায়েন করা হবে। নিরাপত্তার জন্য আনাচে-কানাচে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। সেই সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে উন্নত প্রযুক্তির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) যন্ত্র। 

সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন নারী কর্মীরাও। তাদের মূল রুট ও পর্যটন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে। ইংরেজি ভাষা শেখানো হয়েছে। এমনকি সুন্দরভাবে কথা বলার ধরনও শেখানো হয়েছে। যেসব এলাকায় মোতায়েন করা হবে তার ল্যান্ডমার্ক সম্পর্কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে খুব সহজেই দিকনির্দেশনা দিতে পারে। ট্রাফিক পুলিশ রাস্তা, ভেন্যু ও হোটেলগুলোকে সুরক্ষিত করতে কমপক্ষে ১৮০টি চার চাকার গাড়ি ও ৯৫০টি দুই চাকার গাড়ি মোতায়েন করতে পারে।

পুলিশের বিশেষ কমিশনার (ট্রাফিক) এসএস যাদব বুধবার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, তারা শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বিস্তৃত ব্যবস্থা করেছে। 

অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, ট্রাফিক পুলিশ শহরের ৩০টি এলাকা চিহ্নিত করেছেন, যেখানে কর্মী মোতায়েন করা হবে। জেলা পুলিশের সহায়তায় এসব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। 

আরও বলেন, তারা ৮০টি ক্রেন মোতায়েন করবেন, যাতে কোনো ধরনের সমস্যা হলে গাড়িটি অবিলম্বে ঘটনাস্থল থেকে সরানো যায়। শহরে অননুমোদিত প্রবেশ যাতে না ঘটে এজন্য অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে সম্মেলনে ভিড়ের মধ্যে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে দিল্লি পুলিশ এআই-ভিত্তিক যন্ত্রের ব্যবহার করবে। যন্ত্রটি ব্যবহার করে আপগ্রেডেড ফেসিয়াল রিকগনাইশন সিস্টেমের মাধ্যমে খুব সহজেই মুখ স্ক্যান করা যাবে। এটি গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি দিল্লি পুলিশের ডাটাবেস থেকে ডাটা ব্যবহার করবে। 

যেখানে অপরাধী ও সন্ত্রাসীসহ ৩ লাখেরও বেশি সন্দেহভাজনদের তথ্য রয়েছে। এছাড়াও সিসিটিভি ক্যামেরা থেকে ভিডিও ফুটেজগুলো সিস্টেমে একত্রিত করা হবে। 

গোয়েন্দ সংস্থাকে উন্নত সফটওয়্যার ও এআই ক্যামেরার এই সংমিশ্রণটি সন্দেহজনক ব্যক্তিদের শনাক্ত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। যৌথ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এই অভিযানের তদারকির জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বেশ কয়েকটি গ্রুপকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। 

বিশেষ করে জিহাদি অপারেটিভদের ওপর নজর রাখছে, যারা বিশ্বব্যাপী সম্মেলনকে ব্যাহত করা হুমকি দিয়েছে।

LEAVE A REPLY