হাতুরাসিংহে বললেন ‘আপিতা ওনা সাতান কারা দিনান্না’

হিন্দি কিংবা উর্দু হলে তবু কথা ছিল। পুরো না বুঝলেও কিছুটা তো অনুমান করা যেত। কিন্তু প্রশ্নোত্তর পর্ব যখন চলছে দুর্বোধ্য সিংহলি ভাষায়, তখন উপস্থিত বাংলাদেশিদের ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় কী! বাংলাদেশ দলের সংবাদ সম্মেলনে ইংরেজির ফাঁকে ফাঁকে নিজেদের ভাষায় একেকটি প্রশ্ন নিয়ে ঢুকে পড়ছিলেন শ্রীলঙ্কান সাংবাদিকরা। জবাব দিতে থাকা চন্দিকা হাতুরাসিংহেও যে লঙ্কানই।

না বোঝা ভাষার চক্করে তাই হারিয়ে যান এশিয়া কাপ কাভার করতে শ্রীলঙ্কায় আসা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম কর্মীরা। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে উঠে যাওয়ার সময় অনন্যোপায় তাঁদেরই একজনের অনুরোধে মিশে থাকা রসিকতাও অবশ্য ধরতে পেরেছেন হাতুরাসিংহে, ‘সিংহলি ভাষায় বলা আপনার কথাগুলো একটু অনুবাদ করে পাঠাবেন প্লিজ।’

একদমই না বোঝা সব বাক্যের ভিড়ে কয়েকটি অনুবাদ করে দেওয়ার জন্য শ্রীলঙ্কান এক সাংবাদিকের সহায়তা পাওয়া গেল। আজকের শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ ম্যাচ সামনে রেখে হাতুরাসিংহের সবচেয়ে আকর্ষণীয় কথাটির অর্থ করে দিলেন তিনি।

বাংলাদেশ দলের হেড কোচ বলেছিলেন, ‘আপিতা ওনা সাতান কারা দিনান্না।’ এর ইংরেজি থেকে বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘ঘুরে দাঁড়িয়ে আমরা এই ম্যাচটি জিততে চাই।’নিজের মাতৃভাষায় কথা বলে স্বাচ্ছন্দ্য বোধই করার কথা সাকিবদের কোচের। অবশ্য মাঝখানে সিংহলি ভাষায় করা একটি প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ইংরেজিতেও।

নিজের ভাষা থেকে হুট করে সরে যাওয়ার ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের লিফটে নিচে নেমে যেতে যেতে, ‘সিংহলি ভাষা যে আমিও খুব ভালো বলতে পারি, তেমন কিন্তু নয়। দেখেছেন নিশ্চয়ই যে একটি প্রশ্নের উত্তর আমি ইংরেজিতে দিয়েছি। কারণ সিংহলি ভাষায় জবাবটি কী হবে, তা খুঁজেই পাচ্ছিলাম না।’

না পাওয়ার কারণ দীর্ঘদিন ধরে নিজের ভাষায় কথা বলার অনভ্যাস। খেলোয়াড়ি জীবন শেষেই কোচিংয়ে মনপ্রাণ সঁপে দেওয়া এই লঙ্কান অস্ট্রেলিয়ায় থিতু হওয়ার চেষ্টা শুরু করেন।

এক পর্যায়ে সিডনিতে চলেও যান। যখন যান, তখন সন্তানরা সবাই ছোট। তাঁদের পড়াশোনাও অস্ট্রেলিয়াতেই। যেটি সিংহলি ভাষায় হওয়ার কোনো কারণই নেই। আবার কোচিং ক্যারিয়ারে একটু একটু করে এগোতে এগোতে নিউ সাউথ ওয়েলসের কোচ হয়ে যাওয়ায় হাতুরাসিংহেকে কাজও করতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের নিয়েই। নিজের ভাষার ব্যবহার তাই কমতে থাকে।

মাঝখানে কিছুদিনের জন্য শ্রীলঙ্কার হেড কোচ হলেও তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটাই দেশের বাইরে। অস্ট্রেলিয়া হোক কিংবা বাংলাদেশ, ইংরেজির দুনিয়ায় আটকে যাওয়া হাতুরাসিংহের বাসায় অবশ্য মাতৃভাষার চর্চা থাকার কথা। কারণ তাঁর স্ত্রীও তো শ্রীলঙ্কানই। কিন্তু সন্তানদের কারণে সেই চর্চাও খুব একটা হয় বলে মনে হলো না তাঁর কথায়, ‘ওরা যাতে দেশের কথা ও ভাষা ভুলে না যায়, সে জন্য আমি ওদের সঙ্গে সিংহলি ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করি। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যেটি হয়, আমি ওদের বকাঝকা করার সময়ই কেবল সিংহলি ভাষাটি ব্যবহার করি।’

ব্যবহার যখন কম, তখন অনেক সময়ই জানা অনেক কিছু ভুলে যান। এ জন্যই ভাষা খুঁজে না পেয়ে নিজের ভাষায় হওয়া প্রশ্নের জবাবও ইংরেজিতে দিতে হয়। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের সময় হুট করে পদত্যাগ করা হাতুরাসিংহে সে বছরেরই ডিসেম্বরে দায়িত্ব নিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কা দলের। তখন মাতৃভাষায় কথা বলার অফুরন্ত সুযোগও মিলেছিল তাঁর। সেই সময়েই বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটীয় বৈরিতাও পৌঁছেছিল চরমে। বিশেষ করে ২০১৮-র নিদাহাস ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের সময় লঙ্কানদের তাদের মাটিতে দুই ম্যাচেই হারায় বাংলাদেশ।

এর একটিতে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান দলবল নিয়ে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে চান। তাতে দুই দলের আগুনে লড়াইয়ের উত্তাপ বাড়ে। তবে এবার সেটি বাড়াতে চাইলেন না হাতুরাসিংহে। বরং নিভিয়েই দিলেন একরকম, ‘বাংলাদেশ সেবার দুর্দান্ত খেলে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছিল। তবে ওটা ছিল ভিন্ন সংস্করণ। এরপর অনেক জলই গড়িয়েছে। সুতরাং মনে হয় না ওই (দুই) ম্যাচ থেকে আমাদের তেমন কিছু নেওয়ার আছে।’

আজকের ম্যাচে অবশ্য কিছু করারও আছে, ‘আপিতা ওনা সাতান…।’

LEAVE A REPLY