বিদেশি বিনিয়োগ নিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ

বাংলাদেশে বিনিয়োগ সবচেয়ে লাভজনক। বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, পর্যাপ্ত জনবল, সস্তা শ্রম, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে এখানে। এছাড়াও এখানে পণ্য উৎপাদন করে বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে যে কোনো দেশ বিনিয়োগ করলে সব ধরনের নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।

বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘কমনওয়েলথ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন’র কর্ম অধিবেশনে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বক্তারা একথা বলেন।

অধিবেশনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ডমিনিকা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিন্স হেন্ডারসন, শ্রীলংকার বিনিয়োগ প্রচার প্রতিমন্ত্রী দিলুম এস আমুনগামা, ক্যামেরুন সরকারের অর্থমন্ত্রী লুই পল মোতাজে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জাভেদ আখতার এবং ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্রীনি নাগরাজন বক্তব্য দেন।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ২ দিনব্যাপী ‘কমনওয়েলথ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্মেলন’ উদ্বোধন হয় এদিন। এতে এই অঞ্চলের দেশগুলোর ১৩ জন মন্ত্রীসহ ৩০০ জনের বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কাউন্সিলের (সিডব্লিউআইসি) সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জি ফাউন্ডেশন যৌথভাবে সম্মেলনের আয়োজন করেছে।

বুধবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলন উদ্বোধন করেন। এরপর রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুটি ওয়ার্কিং সেশন হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিডব্লিউআইসির চেয়ারম্যান লর্ড মারল্যান্ড। সেশন দুটি সঞ্চালনা করেন বিবিসি ব্রডকাস্টার তানিয়া বেকেট। গ্র“প আলোচনার বিষয় ছিল : বাংলাদেশে কমনওয়েল অংশীদারত্বের সুযোগ। শুরুতে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে একটি উপস্থাপনা তুলে ধরা হয়।

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫-২০১৬ সাল থেকে ২০১৭-২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৮-২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু করোনার কারণে তাতে ছন্দপতন হয়। কিন্তু এখনো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। তিনি বলেন, সরকারের কিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত দেশকে এগিয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্তু করোনা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপ নেবে। তবে এ সময়ে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো সব ধরনের বাণিজ্য সুবিধা উঠে যাবে। রপ্তানিতে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মধ্যদিয়েই বাংলাদেশকে রপ্তানিতে টিকে থাকতে হবে। এ অবস্থায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি।

তিনি বলেন, আমরা ক্রস বর্ডার ট্রেডিংয়ের (সীমান্ত বাধাহীন বাণিজ্য) পক্ষে। মুক্ত বাণিজ্য বাড়াতে হবে। কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলোর উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার সব ধরনের নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তারমতে, এ অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ঐতিহাসিক। এই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করতে হবে। এ সময়ে ডিজিটাল বাণিজ্যের ওপর জোর দেন তিনি।

অধিবেশনে সালমান এফ রহমান বলেন, কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশগুলো থেকে আরও বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ। এজন্য যে কোনো নীতি সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। বিশ্বের স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া সমুদ্রপথ ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রতিযোগিতায় বঙ্গোপসাগর একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। এই পথ ব্যবহার করে দেশগুলো বাণিজ্য বা উৎপাদন একত্রিত করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।

তিনি বলেন, ‘উন্নত বিশ্ব এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির মধ্যে সংযোগকারী হিসাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। এ বছর শেষে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে ৪৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতির চালিকাশক্তি পোশাক রপ্তানি, রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়)। এছাড়া এক দশক ধরে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ধরে রেখেছে।’

সালমান এফ রহমান বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছে। আমরা যে কোনো ধরনের বিদেশি বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। বিনিয়োগে সহায়তার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস (এক জায়গায় সব ধরনের সেবা) চালু করেছে বিডা। 
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। এখানে বিশাল বাজার রয়েছে। কিন্তু বিদেশি অনেকের বাংলাদেশ সম্পর্কে ধারণা নেই। বাংলাদেশে কৃষিপ্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ফল এবং সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ অন্যতম। বর্তমানে স্ট্রবেরি, অ্যাবোকাডো, ড্রাগনসহ অনেক ফল ও সবজি উৎপাদিত হয়। এগুলো প্রক্রিয়াকরণে যথেষ্ট বিনিয়োগ নেই। এছাড়া বাংলাদেশে ওষুধ খাত, হালকা প্রকৌশল, বস্ত্র, তৈরি পোশাক এবং সফটওয়্যার তৈরি শিল্পের সম্ভাবনা ব্যাপক।’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘যে কোনো দেশেরই নিজস্ব কিছু প্রযুক্তি ও কৌশল রয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রযুক্তি ও জ্ঞানের বিনিময় হয়। এতে লাভবান হয় উভয় দেশ।’

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, দক্ষ-অর্ধদক্ষ পর্যাপ্ত জনবল, তুলনামূলকভাবে সস্তা শ্রম, ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে এখানে। ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশাল পরিবর্তন হয়েছে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে কাজ এগিয়ে চলছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি এখানে পণ্য উৎপাদন করে বিশ্বের অন্যান্য দেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

মাহবুবুল আলম বলেন, বিনিয়োগে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হয়েছে। ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জাভেদ আখতার বলেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেশি। অর্থাৎ বাংলাদেশ ক্রয় ক্ষমতায় এগিয়ে রয়েছে। এছাড়াও এদেশে পণ্য উৎপাদন খরচ কম।

LEAVE A REPLY