পুতিন ও কিমের বৈঠকের স্থান অজানা

ছবি: সংগৃহীত

জল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল মঙ্গলবার রেলপথে রাশিয়া সফরে গেলেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। কোরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টির (কেডাব্লিউপি) এই নেতার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বৈঠক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য কোরীয় নেতার কাছে অস্ত্র চাইবেন পুতিন। রাশিয়ার আমুর অঞ্চলের ভস্তচনি কসমোদ্রুম মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ ঘাঁটিতে দুই নেতার সাক্ষাৎ হতে পারে।

কভিড মহামারির পর কিম জং উন প্রথমবারের মতো উত্তর কোরিয়ার বাইরে গেলেন। ২০১৯ সালে সর্বশেষ বিদেশ সফরেও তিনি পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে রাশিয়া গিয়েছিলেন। বুলেটপ্রুফ ট্রেনে চেপে রাশিয়ায় উন বিশেষভাবে সুরক্ষিত একটি ট্রেনে চেপে রাজধানী পিয়ংইয়ং থেকে রাশিয়ার উদ্দেশে গত রবিবার যাত্রা শুরু করেন উন। পুতিন বর্তমানে রাশিয়ার বন্দরনগরী ভ্লাদিভস্তকে ইস্টার্ন ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে রয়েছেন।

জায়গাটি উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত থেকে কাছে। পুতিন ও উনের সাক্ষাৎ নিয়ে রুশ গণমাধ্যমেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সাংবাদিকদের পুতিন বলেন, তিনি ভস্তচনি কসমোদ্রুমে যাবেন। উল্লেখ্য, এই জায়গা ভ্লাদিভস্তক থেকে প্রায় এক হাজার কিলোমিটার দূরে।পুতিন বলেন, ‘আমার সেখানে (ভস্তচনি কসমোদ্রুম) একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। আমি সেখানে গেলে আপনারা সেই বিষয়ে জানতে পারবেন।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্কো সম্ভবত পিয়ংইয়ংয়ের কাছে কামানের গোলাবারুদ ও ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র চাইবে। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া সর্বাধুনিক স্যাটেলাইট ও পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন প্রযুক্তি চাইতে পারে। এ নিয়ে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, দুই নেতা স্পর্শকাতর ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতার বিষয়ে আলাপ করবেন, যা জনসমক্ষে ঘোষণা করা উচিত নয়।

বিবিসি জানিয়েছে, উনের সঙ্গে রয়েছেন উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সুন হুই। তিনি উনের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাক্ষাৎ আয়োজন করেছিলেন। আরো রয়েছেন পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি তদারককারী প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা রি পিয়ং চো, মহাকাশ ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান পাক থায়ে সং এবং গোলাবারুদ কারখানা বিভাগের পরিচালক জো চুন রিয়ং। উনের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর বোন কিম ইয়ো জং। 

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার বলেন, ‘আমি দুই দেশকে (রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া) মনে করিয়ে দিচ্ছি যে পিয়ংইয়ং থেকে মস্কোতে অস্ত্র গেলে তা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার লঙ্ঘন হবে।’ 

প্রতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার গতির ট্রেন

উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুংয়ের প্রতীকী নাম ‘তায়েইংহো’ অনুসারে রাখা হয়েছে উনকে বহনকারী ট্রেনটির নাম। বুলেটপ্রুফ ট্রেনটিতে চেপে স্বল্পগতিতে রাশিয়া যান কিম জং উন। বিবিসি বলছে, সম্ভবত এক হাজার ১৮০ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে ২০ ঘণ্টার মতো সময় নেন উন। এই ট্রেনের গতি হতে পারে ঘণ্টায় মাত্র ৫০ কিলোমিটার। যেখানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে চলা ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার। জাপানের বুলেট ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় সেকেলে অবস্থাই এই দীর্ঘযাত্রার কারণ হতে পারে।

উনের বাবা কিম জং ইল রাশিয়া গিয়েছিলেন ট্রেনে চেপেই। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দেশ শাসনকারী জং ইল ২০০১ সালে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ১০ দিন ট্রেন ভ্রমণ করেছিলেন।

সূত্র : এএফপি, বিবিসি

LEAVE A REPLY