কানাডা-ভারত দ্বন্দ্ব: নিহত শিখ নেতার নথি প্রকাশ করল ভারত

ছবি: সংগৃহীত

গোয়েন্দা জোট ‘ফাইভ আইজ (পাঁচ চোখ)’ নেটওয়ার্কের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কানাডার গণমাধ্যম সিটিভি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন কানাডায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেন।

গত জুন মাসে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের ভ্যাংকুভারে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো গত সোমবার বলেন, হরদীপ সিং হত্যায় ভারত সরকারের গোয়েন্দাদের জড়িত থাকার বিষয়ে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। এর পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কার ও ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে কানাডা ও ভারত। এমনকি কানাডার নাগরিকদের ভিসা দেওয়া স্থগিত রেখেছে নয়াদিল্লি। অন্যদিকে ভারত থেকে কূটনীতিকদের ফেরানোর কথা জানিয়েছে অটোয়া।

এদিকে নিজ্জারের নথি প্রকাশ করেছে ভারত। প্রকাশিত নথিতে বলা হয়েছে, নিহত জঙ্গি নিজ্জারের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগ ছিল। ভারতের নানা জায়গায় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন নিজ্জার। ১৯৮০ সাল থেকেই নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন নিজ্জার।

এর জেরেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। আশির দশকে এক স্থানীয় গুন্ডা থেকে কী ভাবে হরদীপ জঙ্গি হয়ে উঠল তা তুলে ধরা হয়েছে ওই নথিতে। 

নিজ্জার ১৯৯৬ সালে পাসপোর্ট জালিয়াতি করে কানাডায় যায়। সেখানে তখন ট্রাকচালক হিসাবে কাজ শুরু করেন তিনি। পাকিস্তানে অস্ত্র ও বিস্ফোরক তৈরির প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন।

গুরনেক সিংহের ছত্রছায়ায় ক্রমশ আন্তর্জাতিক দুনিয়ার কুখ্যাত জগতে পরিচিতি তৈরি করে নিজ্জার। তিনি ১৯৮০ থেকে  ১৯৯০-এর মধ্যে জঙ্গি সংগঠন খলিস্তান কমান্ডো ফোর্সের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১২ সাল থেকে খলিস্তান টাইগার ফোর্সের প্রধান জগতার সিংহ তারার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে নিজ্জার। জগদীপের সূত্রেই কারণেই পাকিস্তান সম্পর্ক ভালো হয় তার। পাকিস্তান থেকে ফিরে সে মাদক ও চোরাচালানে প্রাপ্ত অর্থ সন্ত্রাসমূলক কার্য়কলাপে ব্যবহার করতে শুরু করে।

জগদীপের সঙ্গে পরিচিত হয়েই পঞ্জাবে নাশকতামূলক কার্যকলাপের পরিকল্পনা করেন নিজ্জার। কানাডায় নিজস্ব সংগঠন তৈরি করে। ২০১৫ সালে নিজ্জারের দলের সদস্যেরা কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে নথিতে। ২০১৪ সালে হরিয়ানার সিরসায় ডেরা সাচ্চা সউদায় হামলা করার পরিকল্পনা করেন নিজ্জার। নিজে ভারতে নিজে ঢুকতে না পেরে তার সংগঠনকে নির্দেশ দেন প্রাক্তন ডিজিপি মহম্মদ ইজহার আলমকে নিশানা করার জন্য। পঞ্জাবের গ্যাংস্টার আরশদীপ সিংহ গিল ওরফে আর্শ ডালার সঙ্গে যোগ দেয়। এর পরে বহু কুখ্যাত কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠে নিজ্জারের বিরুদ্ধে।

ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ ঘনিষ্ঠ মিত্রদের হরদীপ হত্যাকাণ্ডের প্রকাশ্যে নিন্দা করতে বলেছিল অটোয়া। তবে এই প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করেন ডেভিড কোহেন। তিনি বলেন, দেখুন, এটি গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের বিষয় ছিল। এ বিষয়ে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক যোগাযোগ হয়েছে। হরদীপ সিং হত্যার ঘটনা তদন্ত ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কানাডাকে সহায়তার জন্য ভারতকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের আহবান জানানোর পর ডেভিড কোহেনের এই বক্তব্য সামনে এলো। 

সূত্র: আনন্দবাজার
 

LEAVE A REPLY