স্বাভাবিক নিয়মে বাড়তি ক্রিয়েটিনিন বের করে দেয় কিডনি। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং সেগুলো সমাধানের উপায় কী—সে বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ
আমাদের দুটো কিডনির কাজ হলো শরীরে যে বর্জ্য বা জঞ্জাল তৈরি হয় তা বের করে দেওয়া। কিডনিতে আছে একটি ফিল্টার। এটি রক্তকে ফিল্টার করে আর কিছু জিনিস ফিল্টার করে বের করে দেয়, আবার কিছু জিনিস ফিরিয়ে দেয় রক্তে যেমন—অ্যালবুমিন, গ্লুকোজ।
একই সঙ্গে বাড়তি পানি বের করে দেয়, পানি ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্য ঠিক রাখে, হরমোন নিঃসরণ করে, রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও সক্রিয় ভিটামিন ডি তৈরি করে। এ ছাড়া বের করে দেয় ক্রিয়েটিনিন বলে একটি জিনিস, যা পেশি থেকে আসে।
কিডনির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করুন
প্রত্যেকের রক্তে কিছু ক্রিয়েটিনিন থাকা উচিত। কিন্তু বেশি হলে সেটা হলো কিডনি সমস্যার ইশারা।
হতে পারে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ। আমাদের কিডনি অসুস্থ হলেও বোঝা যায় না, নীরবে সর্বনাশ ঘটে। তাই বয়স ৩০ থেকে ৪০ হলে কিডনি চেক করা উচিত। আগেভাগে কিডনির সমস্যা ধরা পড়লে চিকিৎসা করে এই রোগকে ঠেকানো যাবে এবং রোগের গতি ধীর করা যাবে।
রোগ নির্ণয়
কিডনি চেক করতে হলে দুটো পরীক্ষা করতে হয়। প্রস্রাবে অ্যালবুমিন টেস্ট করতে হয় ও রক্তের ক্রিয়েটিনিন মাত্রা দেখতে হয়। পুরুষের জন্য ০-৭-১.৩ এমজি/ডিএল ও মহিলাদের জন্য ০.৬-১.১ এমজি/ডিএল হলো ক্রিয়েটিনিনের স্বাভাবিক মাত্রা। ক্রিয়েটিনিন স্বাভাবিক থাকলে বোঝা যাবে কিডনির ফিল্টার করার ক্ষমতা ঠিক আছে। আর তা না হলে বুঝতে হবে সমস্যা হয়েছে।
ক্রিয়েটিনিন একটু বেশি হলে ডাক্তার রক্তে ইউরিয়া নাইট্রোজেনের মাত্রা দেখেন। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা দেখে ডাক্তার ইজিএফ সম্পর্কে জানতে পারেন। আর এর ফলাফল দেখে বুঝতে পারেন কিডনি ফিল্টার কী রকম কাজ করছে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এর চিকিৎসা করতে হবে কিডনিবান্ধব রক্তচাপ কমানোর ওষুধ দিয়ে।
ক্রিয়েটিনিন বৃদ্ধির যত কারণ
– কিডনিতে সংক্রমণ
– অতিরিক্ত শরীরচর্চা
– নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ
– পানিশূন্যতা
– খুব বেশি প্রোটিন গ্রহণ
– উচ্চ রক্তচাপ
– প্রি-ক্ল্যাম্পসিয়া
খাবার গ্রহণে চাই সতর্কতা
শুধু কিডনির জন্য নয়, ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপ—এ দুটো সমস্যা থাকলেও একে নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। একে স্বাভাবিক রাখতে হলে—
– রেড মিট ও ফাস্ট ফুড খাওয়া সীমিত করতে হবে
– আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে
– সুষম খাবার খেতে হবে
– আপেল ও স্ট্রবেরি ফল খাওয়া ভালো
– পরিমিত পরিমাণে খেতে হবে আমিষ
– পানি পান করতে হবে প্রয়োজনমতো
– লবণ খাওয়া কমাতে হবে
– ধূমপান করে থাকলে বাদ দিতে হবে
– যাঁরা মদ্যপান করেন তাঁরা কম পান করবেন